১. ক্রমবর্ধমান তরঙ্গ- এই তরঙ্গসমূহ স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এরা ছোট ছোট উপ-তরঙ্গ দ্বারা গঠিত যা সহজেই দৃশ্যমান।
কারেক্টিভ তরঙ্গের গঠন জটিল প্রকৃতির হয়। এদের ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ
সমানঃ
এই কখগ ধাপ ৩-৩-৫ পর্যায় মেনে গঠিত হয় যেখানে তিনটি তরঙ্গই সমান দৈর্ঘ্যের।
অনিয়মিতঃ
এই কখগ ধাপ ৩-৩-৫ পর্যায় মেনে গঠিত হয় যেখানে খ তরঙ্গ ক তরঙ্গকে ছাড়িয়ে যায় এবং গ তরঙ্গ ক তরঙ্গের কাছে (বা নিচে) শেষ হয়।
অনুভূমিক ত্রিভুজঃ
৫-তরঙ্গের ত্রিভুজ আকৃতি ৩-৩-৩-৩-৩ এর ছোট তরঙ্গ মিলে গঠিত হয়। সাধারণত এই ত্রিভুজগুলো ৪র্থ ইম্পালসিভ তরঙ্গে গঠিত হয়।
দ্বিগুণ তিন তরঙ্গের উদাহরণঃ
উপরোক্ত ছবিতে বড় তরঙ্গকে কখগ দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে। প্রতিটি বড় তরঙ্গই ছোট ছোট তরঙ্গ দ্বারা গঠিত। এই ছোট বা মধ্যম তরঙ্গকে অআই দ্বারা চিহ্নিত করতে হয়।
তিনগুন তিনঃ (Triple Three)
এই কখগ-X-কখগ-X-কখগ ধাপ যেকোন তিনটি ধাপে (আঁকাবাঁকা, সমান, অনিয়মিত অথবা ত্রিভুজ) গঠিত হয় এবং দুইটি X তরঙ্গ দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
তিনগুন তিন তরঙ্গের উদাহরণঃ
সবসময় ইলিয়ট তরঙ্গের ধাপসমূহের ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। কিন্তু যদি কখন আটকে যান বা ধাপসমূহ ঠিকভাবে না আঁকা যায় তবে অন্যান্য পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি যেমন ইন্ডিকেটর, ফিবোনাক্কি ইত্যাদি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিন।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়ঃ সকল কখগ কারেকশনে (আঁকাবাঁকা, সমান, অনিয়মিত, দ্বিগুণ তিন, তিনগুন তিন) গ তরঙ্গ টি ৫ তরঙ্গের ধাপে গঠিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গ তরঙ্গের পর নতুন ইম্পালসিভ তরঙ্গে ট্রেডের/বিনিয়োগের পরিকল্পনা করার পূর্বে এটা ভাল করে দেখে নিতে হবে।
প্রতিটি পূর্ণ ইলিয়ট ওয়েব ৫টি ইম্পালসিভ তরঙ্গ দ্বারা গঠিত যা মূল ট্রেন্ড অনুসরণকারী ৩টি কারেক্টিভ তরঙ্গের দিকনির্দেশ করে। যাদের বলা হয় “৫-৩ পথ” ।
এই ৫-৩ গতিপথ যে কোন সময় ছকের ( M1, M5, M15 থেকে W1, M1 পর্যন্ত সব) জন্য সত্য।
ইহা একটি উচ্চমুখী ট্রেন্ড যেখানেঃ
১-২-৩-৪-৫ হচ্ছে ইম্পালসিভ পথ, যেখানে তরঙ্গ ১-৩-৫ হচ্ছে ইম্পালসিভ তরঙ্গ এবং ২-৪ হচ্ছে কারেক্টিভ তরঙ্গ।
ক-খ-গ হচ্ছে কারেক্টিভ পথ, যেখানে ক-খ হচ্ছে ইম্পালসিভ তরঙ্গ এবং গ হচ্ছে কারেক্টিভ তরঙ্গ।
কিন্তু, এসব ইম্পালসিভ অথবা কারেক্টিভ বিষয়ের মানে কি ?
এগুলো বুঝতে হলে আমাদের যেতে হবে লেনদেনকারীদের আচরণ বিষয়ক বিবরণীতে এবং কিভাবে এগুলো ইলিয়ট অনুসারে কাজ করে।
তরঙ্গ ১ – ক্রেতাদের প্রথম দলের ইম্পালসিভ আশা প্রকাশ করে। তারা কেনার একটি ভাল কারণ খুজে পায় (ফান্ডামেন্টাল এবং টেকনিক্যাল কারণ). আর তাই তারা মার্কেটকে উপরে উঠতে চাপ প্রয়োগ করে।
তরঙ্গ ২ – ইম্পালস তরঙ্গটি পরিবর্তিত হয়ে যায় কারণ আসল ক্রেতারা তাদের লেনদেন লাভ নিয়ে বন্ধ করে দেয়। যখন অন্য বিনিয়োগকারীরা, যারা এই সুযোগ নিতে পারেনি তারা নতুন সুযোগের আপেক্ষায় বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করে।
তরঙ্গ ৩ – সাধারণত সবচেয়ে লম্বা এবং শক্তিশালী তরঙ্গ। প্রত্যেক বিনিয়োগকারী যারা কিনতে চায় তারা ( যারা তরঙ্গ ১ এ সুযোগ হারিয়েছে এবং যারা সুযোগ পায়নি ) এখান থেকে কিনতে থাকে। আরও যোগ হয় তারা যারা তরঙ্গ ৩ এর মাঝে এসে সন্তুষ্ট হয় যে তরঙ্গটি উচ্চমুখী। সবকিছু মিলে একটি বড় বেগবৃদ্ধির মাধ্যমে এটি মূল ট্রেন্ডে পরিণত হয়।
তরঙ্গ ৪ – আগে হোক বা পরে হোক, এখন লাভ তুলে নেওয়ার সময়, এই ইম্পালসিভ পথ পুনরায় পরিবর্তিত হতে শুরু করে। যাইহোক, এই অগভীর পরিবর্তনের মাধ্যমে বোঝা যায় যে আরও ক্রেতা রয়েছে যারা এই ট্রেন্ডে যোগ দিতে চায়।
তরঙ্গ ৫ – তাই পুনরায় ট্রেন্ড উচ্চমুখী হওয়া শুরু করে, কিন্তু মার্কেট ক্রয়াধিক ( অত্যাধিক ক্রয়) হয়েছে এবং ইহা নিশ্চিত যে এখন একটি বিপরীত পরিবর্তন হবে। তরঙ্গ ৫ এর শেষ বোঝা যায় বিক্রয়াধিক ( অত্যাধিক বিক্রয় ) মার্কেট ( উচ্চমুখী ট্রেন্ডের মধ্যে ) এবং ডাইভারজেন্স দ্বারা।
ডাইভারজেন্স – এটি বলতে বুঝায় যে, মার্কেট উচ্চমুখী ট্রেন্ডে ক্রয়াধিক দেখা যাচ্ছে কিন্তু RSI ইন্ডিকেটরে বিপরীত দিক নির্দেশিত বিক্রয়াধিক দেখাচ্ছে। এতে বুঝা যায় যে উচ্চমুখী মার্কেট নিম্নগামী হবে। ( বিপরীতক্রমে নিম্নমুখী মার্কেটের ক্ষেত্রে উচ্চগামী )
তরঙ্গ ক, খ, গ – এই তরঙ্গগুলো তৈরী হয় প্রধান ট্রেন্ডের বিপরীত তরঙ্গের ট্রেন্ড পদ্ধতি হিসেবে। এই সময় নতুন ট্রেন্ড গঠিত হতে পারে আবার নাও হতে পারে এবং নতুন ১-২-৩-৪-৫-ক-খ-গ ক্রমানুসারে তরঙ্গগুলো শুরু হতে পারে।
ইলিয়ট তরঙ্গ এবং চক্রের প্রকারভেদঃ
ইহা খুব ভাল হতো যদি এই ৫-৩ তরঙ্গগুলো পেতাম এবং বিনিয়োগ করতাম, কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আমরা যখন মূল্য তালিকার দিকে তাকাই তখন এই রকম মসৃণ ৫-৩ তরঙ্গ পাওয়া যায় না, তার পরিবর্তে দেখা যায় গোলক ধাঁধার উপর নিচ পথের মত। এখন আপনি কি করবেন?
ইলিয়ট তরঙ্গ তত্ত্ব বলে যে প্রত্যেক তরঙ্গই ছোট ছোট তরঙ্গ দ্ধারা গঠিত।
যদি প্রত্যেক তরঙ্গই ছোট ছোট তরঙ্গের শ্রেণী দ্বারা গঠিত হয় তাহলে ছবিটি দেখতে এরকমঃ
ইলিয়ট তরঙ্গের চক্রগুলো
ইলিয়ট তরঙ্গ অনুসারে একটি বড় তরঙ্গ তৈরী হয় প্রতিটি পূর্ণ ১-২-৩-৪-৫-ক-খ-গ তরঙ্গের সমাবেশে ( বড় তরঙ্গের একটি চক্র ) ।
নিচে ইলিয়ট তরঙ্গ চক্রের একটি পরিচিত তালিকা এবং এদের বিভিন্ন প্রকারের নাম দেওয়া হলোঃ
তরঙ্গের প্রকার ৫ এর ট্রেন্ড ৩ এর বিপরীত ট্রেন্ড সময়ের পরিধি
সর্ব্বোচ্চ বৃহৎচক্র [[[[[[[[ [[ I] [II] [III] [IV] [V] [অ] [আ] [ই] শতাব্দী, যুগ
বৃহৎচক্র ( I) (II) (III) (IV) (V) (অ) (আ) (ই) যুগ, বাৎসরিক
চক্র I II III IV V অ আ ই বাৎসরিক, ত্রিমাসিক, মাসিক
প্রাথমিক [ ১] [২] [৩] [৪] [৫] [ক] [খ] [গ] ত্রিমাসিক, মাসিক, সপ্তাহিক, প্রতিদিন
মাধ্যমিক ( ১) (২) (৩) (৪) (৫) (ক) (খ) (গ) মাসিক, সপ্তাহিক, প্রতিদিন
গৌণ ১ ২ ৩ ৪ ৫ ক খ গ মাসিক, সপ্তাহিক, প্রতিদিন, ২৪০ মিনিট
মিনিট [ i] [ii] [iii] [iv] [v] [অ] [আ] [ই] সপ্তাহিক,প্রতিদিন,২৪০-৬০ মিনিট
মিনিটি ( i) (ii) (iii) (iv) (v) (অ) (আ) (ই) প্রতিদিন, ২৪০-৬০ মিনিট
উপমিনিটি i ii iii iv v অ আ ই ২৪০-৬০ মিনিট এবং আরও কম
টীকাঃ অনলাইন ট্রেডিং পদ্ধতিতে তৃতীয় বন্ধনীর পরিবর্তে গোলক চিহ্নও ব্যবহার করা হয়।
আজ আপনাদের যে তত্ত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব তা হয়তোঅনেকেরই পরিচিত। তত্ত্বটি হচ্ছে ইলিয়ট তরঙ্গ তত্ত্ব ( Elliott Waves Theory) . আমরা এই তত্ত্বটি ব্যবহার করেছি এবং এর সাফল্য চমৎকার। এই লেখা লিখতে আমরা বিভিন্ন বই, ওয়েবসাইট, ব্লগ প্রভৃতির সাহায্য নিয়েছি এবং অনুবাদ করেছি। তাই বিভিন্ন ইংরেজি লেখার সাথে আমাদের লেখার মিল পেতে পারেন। আমরা একের পর এক ইলিয়ট তরঙ্গ তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন এবং ব্যবহার করে লাভবান হবেন। ব্যবহারকারীগণ কোন সমস্যায় পড়লে আমাদের জানাবেন, আমরা তার সমাধান করবো।
অভিজ্ঞ ট্রেডারদের প্রতি অনুরোধ রইলো, আপনারা আপনাদের সুপরামর্শ দিয়ে আমাদের সহায়তা করবেন।
ইলিয়ট তরঙ্গ তত্ত্ব
ইলিয়ট তরঙ্গ হচ্ছে অল্প কিছু শিক্ষার মধ্যে একটি যা বলতে সক্ষম যে মার্কেট এখন কোথায় আছে, মার্কেট পরবর্তীতে কোথায় যেতে পারে এবং লেনদেনকারীদের জন্য কি সুযোগ রয়েছে।
যাই হোক, এটা অনেক লেনদেনকারীর কাছে গোপন নয় যে ইলিয়ট তরঙ্গ তত্ত্ব বোঝা, ব্যবহার করা বা কারও পূর্বাবাস অনুসরণ করার চেয়ে একটি কঠিন শিক্ষা।
ইলিয়ট তরঙ্গের ইতিহাস
আমাদের ইলিয়ট তরঙ্গের সাথে পরিচয় করিয়েছেন রালফ নিলসন ইলিয়ট। ১৯৩০ সালে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে।
তত্ত্বটির মূল একক ভিত্তি হচ্ছে লেনদেনকারীদের আচরণ যা মার্কেট আচরণের পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘটতে দেয় না।
লেনদেনকারীদের আচরণ => মার্কেট আচরণ
ইলিয়টিরা, যাদের মধ্যে আছে অনেক ব্যাংক এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বড় টেকনিকাল কৌশলী, তারা ইলিয়ট তরঙ্গ তত্ত্ব ব্যবহার করেন লেনদেনকারীদের বিনিয়োগের আচরণ বোঝার জন্য এবং সেই অনুযায়ী পূর্বাবাস দিয়ে মার্কেট আচরণ প্রকাশ করেন।
ইলিয়ট তরঙ্গের উপর পক্ষে- বিপক্ষে মতামত
বিপক্ষে
১. ইলিয়ট তরঙ্গের সম্ভাবনা বিশাল। যদি কিছু ইলিয়টিয়ান কে ইলিয়ট তরঙ্গ একই চার্টে বের করতে দেওয়া হয় তবে তারা বিভিন্ন তরঙ্গ বের করে দেখাবেন।
২. ইলিয়ট তরঙ্গের কঠিন কিছু ধাপ এবং নিয়ম রয়েছে।
৩. ইলিয়ট তরঙ্গের শুধু ৩টি কঠিন নিয়ম রয়েছে যা অভঙ্গুর। বাকি নিয়মগুলোর পরিবর্তন, ব্যতিক্রম এবং অকার্যকর হওয়া সম্ভব, যা একে অসীম সম্ভবনার বিশ্বে পরিণত করেছে।
পক্ষে
১. সবসময় সঠিক তরঙ্গ গণনা করে বের করায় ইলিয়ট তরঙ্গের মূল চাবি নিহিত নয় বরং সেই পথ খুজে বের করা যেই পথে ভুলের সম্ভাবনা কম। যেখানে প্রতিটি মূল্যের ধাপেই রয়েছে ছোট সুযোগ, যা আমাদের প্রকৃত তরঙ্গ যে দিকে দিকনির্দেশনা দেয় সে দিকে কিছু লাভ করার সুযোগ করে দেয় । এটিই ইলিয়ট তরঙ্গের কাজ।
২. ইলিয়ট তরঙ্গের লেনদেনকারীরা সাপোর্ট এবং রেসিসটেন্স লাইনের কাছাকাছি প্রবেশ মূল্য খুজে দেখে। তারপর যদি লাইনটি ভেঙ্গে যায় তবে তারা স্বল্প ক্ষতি নিয়ে বের হয়ে যান এবং তরঙ্গের ধাপটি বাতিল করে দেন। যাই হোক, যদি তরঙ্গটি সঠিক হয় তবে এটা ২ অথবা ৫ গুণ বেশী লাভ হয় প্রদত্ত ঝুকির পরিমাণের চেয়ে।
সূচনা
ইলিয়ট তরঙ্গের মূল ভিত্তিসমূহ
ইলিয়ট তরঙ্গের ধাপসমূহ
ইলিয়ট তরঙ্গের নিয়মসমূহ
ইলিয়ট তরঙ্গের ইন্ডিকেটর
ইলিয়ট তরঙ্গের – শুরুর পদক্ষেপ
ইলিয়ট তরঙ্গের- ট্রেডিং পরিকল্পনা
ইলিয়ট তরঙ্গ এবং ফিবোনাক্কি
ইলিয়ট তরঙ্গ- ফিবোনাক্কি একসাথে
ইলিয়ট তরঙ্গ এবং বোলিঞ্জার ব্যান্ড
Hawkish শব্দটি এসেছে ইংরেজি Hawk থেকে যার অর্থ বাজপাখি। শিকারের উপর বাজপাখি যেভাবে আক্রমণাত্মক বা আগ্রাসীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ঠিক সেভাবেই মাঝে মাঝে আগ্রাসী অবস্থানে যেতে হয় কেন্দ্রিয় ব্যাংকেও।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগ্রাসী মনোভাব (সুদের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে) বা কণ্ঠস্বরকেই বলা হয় Hawkish বা Hawkish Tone, ফরেক্স মার্কেটে ফান্ডামেন্টাল আনালাইসিস করার জন্য যা এখন আপনার জানার একান্তই প্রয়োজন।
সাথে জেনে রাখুন Dovish কি তাও। Hawkish এর বিপরীত শব্দটিই হচ্ছে Dovish যা এসেছে ইংরেজি শব্দ Dove বা শান্তির প্রতীক পায়রা থেকে
বিভিন্ন অবস্থার পরিপেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। আর এমনটা প্রায়শই হয় যে নতুন যে পদক্ষেপটা তারা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তা পূর্বেরটার উল্টো।
ধরুন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে। আর তার সাথে যেটা বাড়ছে, তা হল বাজারে অর্থের প্রবাহ।
আর সমস্যার সূত্রপাতটা এখানেই। কারন যখনই বাজারে অর্থের প্রবাহ বেশী হয়ে যায়, তা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় বা মূল্যস্ফীতি তৈরি করে। এই মূল্যস্ফীতি একটি সহনীয় পর্যায়ে থাকলে তা তেমন সমস্যা তৈরি করে না, কারন মানুষের আয়ও বাড়ছে। কিন্তু, যখনই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখনই তা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর এর সমাধান হচ্ছে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানো। তা কিভাবে সম্ভব?
এটা সম্ভব যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার হার কমবে এবং ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার হার আরও বাড়বে। অর্থাৎ, যে অর্থ ব্যাংক থেকে বাজারে স্থানান্তরিত হচ্ছিল, তা আবার বাজার থেকে ব্যাংকে ফেরত যাচ্ছে। আর বাজারে অর্থের সরবরাহ কমার কারনে জিনিসপত্রের মূল্যও কমবে।
চিন্তা করে দেখুন, সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়ায় না হয় মূল্যস্ফীতি কমল। কিন্তু, এর ফলে কি শিল্পকারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণ করা কঠিন হয়ে গেলো না? এর একটা প্রভাবও তো দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। অর্থনীতির চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে যাবে ও প্রবিদ্ধি কমতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি এটা জানে না?
অবশ্যই জানে। কিন্তু, কিছু করার নেই।
একটা কথা আছে, অবস্থার ভিত্তিতে ব্যাবস্থা। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের বৈঠকে নীতিনির্ধারকরা একত্রে বসে আলোচনা করেন, কোনটি বেশি জরুরি। মূল্যস্ফীতি কমানো নাকি অর্থনীতির চাকা আরো সচল করা?
যদি এমন হয় যে, অর্থনীতি খুব ভালো অবস্থানে আছে এবং মূল্যস্ফীতিও সহনীয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আর যদি এমন হয় যে, অর্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে কিন্তু মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মূল্যস্ফীতি কমানোটাই বেশি অগ্রাধিকার পায়। সেক্ষেত্রে, বৈঠকের বিবৃতিগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমানোটাই প্রধান বিষয় হয়ে দাড়ায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এরকম অবস্থানকে বলা হয় Hawkish, এ ধরনের বিবৃতিকে বলা হয় Hawkish Statement এবং অনেকে বক্তব্যের সুরকে Hawkish টোন ও বলে থাকেন। এককথায়, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার যখন জোরালো আশঙ্কা থাকে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন বিবৃতিকে Hawkish বলতে বোঝায় মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, বাড়তে পারে সুদের হার।
ঠিক উল্টোভাবেই যখন অর্থনীতির অবস্থা খারাপ থাকে, তখন কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে অগ্রাধিকার পায় সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল করা। মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এরকম অবস্থানকে বলা হয় Dovish, এ ধরনের বিবৃতিকে বলা হয় Dovish Statement এবং অনেকে বক্তব্যের সুরকে Dovish টোন ও বলে থাকেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন দেশের অর্থনীতিক সমস্যা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা করে এবং এ থেকে উদ্ধারের জন্য যখন সুদের হার বাড়ানোর কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না, এমনকি সুদের হার আরো কমার আশংকা থাকে তখন তাকে Dovish বলা হয়।
কেন জানা গুরুত্বপূর্ণ?
কারন Hawkish বা Dovish, একটি শব্দ দ্বারাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি করতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে, তা সম্পর্কে ধারনা করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেকোনো Hawkish বা Dovish বিবৃতি মার্কেটের উপর সরাসরি বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
যেমন ধরুন, FED কি মূল্যস্ফীতি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত? খুব বেশি আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে বৈঠকে? ফেডের বৈঠকের বিবৃতি থেকে যদি এমন কোন ধারনা পাওয়া যায় যে, সুদের হার বাড়িয়ে ফেড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে ফেডের এ Hawkish টোন ট্রেডারদের মাঝে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে ও ডলার শক্তিশালী হবে। কারন, সুদের হার বাড়া মানেই কারেন্সি শক্তিশালী হওয়া।
প্রফেশনাল ট্রেডারদের কাছে তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বৈঠকের ভাষা (Hawkish/Dovish) সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।