ফরেক্স এ পাগলেও প্রফিট করতে পারে, ছাগলে পারেনা

আমার লেখাটা পড়ে কেউ হয়তো মনে কষ্ট পেতে পারেন, তার জন্য আমি অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ফরেক্স এর প্রতি দিন দিন মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন অতি উতসাহ আর উদ্দিপনা নিয়ে ফরেক্স যুদ্ধে নামছেন নতুন নতুন ট্রেডার। কিন্তু পরিনাম একি… আগের মতোই ৯৫% ট্রেডার প্রফিট তো দুরের কথা নিজের ব্যালেন্সটাকেই টিকিয়ে রাখতে পারেনা।boz-5haditabasi-(goat5).jpg

তাহলে ফরেক্স কি এতোই দু:সাধ্য? আমার মতে  এর উত্তর, ‘না’. আমি মনে করি,  ফরেক্স এ পাগলেও প্রফিট করতে পারে, ছাগলে পারেনা।

এখানে আমি পাগল বলতে বুঝাতে চাচ্ছি, এমন লোকদের যারা ফরেক্স বোঝেনা, উল্ট পাল্টা ট্রেড করে। যেমন ধরুন মার্কেট  Strong sell কিন্তু কোন এক পাগলে সেই মার্কেটে Buy ট্রেড বসালো। তারপর টানা ২ সপ্তাহ নামতে থাকলো। ২ সপ্তাহ নামার পর মার্কেট আবার উঠতে শুরু করলো। অবশেষে ১ মাস পর পাগলের ট্রেডটি TP হিট করলো। পাগল উল্টা ট্রেড দেয়ার পরও কিন্তু পাগল এখন প্রফিটে।

আমি ছাগল বলতে বুঝাচ্ছি, যে শুধু খাই খাই করে। কথায় আছে, ”পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায়।” এই রকম খাই খাই স্বভাবের ছাগলরা যখন ফরেক্স মার্কেটে আসে তখন তারা তাদের ব্যালেন্স নিয়ে এক সপ্তাহও টিকে থাকে না। এই ধরনের ট্রেডারদের হয়তো ফরেক্স মার্কেট সম্পর্কে ভাল জ্ঞানও আছে কিন্তু তাদের এই খাই খাই স্বভাবের কারনে তাদের পতন অনিবার্য। ধরুন, মার্কেট স্ট্রং সেল এবং সেই ছাগল ট্রেডার সেটা বুঝতে পেরেছে। সে তখন সে চিন্তা করলো মার্কেট তো নিশ্চিত নামবে, তাই সে ২০০ পিপস হাতে রেখে বড় ভলিউমের একটা ট্রেড বসালো, মার্কেট উপরের উঠতে শুরু করলো , কিছুক্ষন উপরে উঠে আবার নামা নামা ভাব। এবার ছাগল ট্রেডার ওভার শিউর এখন মার্কেট শিউর নামবে। এবার সে সেম ভলিউমের আরেকটা ট্রেড দিল, ভাবলো কিছু প্রফিট হলে ছেড়ে দেবে। এই সুযোগটা ছাড়া ঠিক হবেনা। কিন্তু মার্কেট নামলো না, আবার উঠতে শুরু করলো। এবার ছাগল ট্রেডারের মেজাজ গরম। সে মার্কেটে বসলেই মার্কেট তার সাথে শত্রুতা শুরু করে। ইতিমধ্যে অনেক লস হয়ে গেছে। তাই সে অনেক চিন্তা ভাবনা করে same volume এর দুটো Buy বসালো।আর তখন থেকে মার্কেট আবার নামতে শুরু করলো। এবার তো বাই এর ট্রেড ধরা। ছাগল ট্রেডারের মেজাজ আরো গরম। প্রচন্ড রাগ উঠে গেছে।মেজাজ গরম করে আরো বড় ভলিউমের একটা সেল মারলো। সাথে সাথে প্রফিট। ক্লজ করবে কি করবেনা এমন চিন্তা করতে করতেই মার্কেট আবার উঠে গেল। এবার বাইয়ের ট্রেড প্রফিটে। ক্লজ করে দিল। মার্কেট আরো উঠে গেল। ছাগল ট্রেডারের একাউন্ট জিরো।

ছাগল ট্রেডার ২ সপ্তাহ পরে তার এক ট্রেডার বন্ধুর সাথে, আরে ভাই মার্কেট কি তোর থেকে কম বুঝি? আমি তো বেটা এনালাইসিস করে বুঝছিলামই মার্কেট ২ সপ্তাহ টানা নামবো। sell  এ তো ট্রেড ও বসাইছিলাম। কিন্তু পরের ট্রেড গুলো যদি না দিতাম, তাইলে তো বেডা আমার ইকুইটি ৩ গুন হয়ে যায়। বেশি খাইতে যাইয়াই এই লস টা খাইলাম। ইশ, মাথা নষ্ট হয়ে যায়।

আপনি যদি ছাগল ট্রেডার হতে না চান তাহলে আগে মানি ম্যানেজমেন্ট শিখুন। প্রফিট তো পরের কথা আগে নিজের ব্যালেন্স বাচানো শিখতে হবে।

কাউকে খোচা দেওয়া বা কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে মানি ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব বোঝানো।

মানি ম্যানেজমেন্ট কি?

চলুন এবার আমরা মানি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলাচনা করি। মানি ম্যানেজমেন্ট হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ফরেক্স ট্রেডাররা তাদের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করে থাকে। ফরেক্স ট্রেডারদের জন্য মানি ম্যানেজমেন্ট খুবই জরুরী। একটি ভাল মানি ম্যানেজমেন্ট আপনার অ্যাকাউন্টকে সর্বদা লস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। একটি ভাল মানি ম্যানেজমেন্ট ফলো করলে আপনার ক্যাপিটাল হারানোর সম্ভাবনা খুব কম।

 

 

 

ভাল মানি ম্যানেজমেন্টের কিছু নিয়ম রয়েছেঃ

 

১. অ্যাকাউন্টের ছোট পার্সেনটেজ নিয়ে রিস্ক নিনঃ

 

অ্যাকাউন্টের ছোট পার্সেনটেজ রিস্ক নেয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ? এর কারন হচ্ছে আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্ট টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রথমে আপনার অ্যাকাউন্ট টিকিয়ে রাখতে হবে, তারপর প্রফিটের কথা ভাবতে হবে।

ভালো ট্রেডার তারাই যারা তাদের অ্যাকাউন্ট টিকিয়ে রাখতে পারে এবং এ ব্যাপারে সচেতন।

যদি আপনি কম রিস্ক নিয়ে ট্রেড করেন তবে কোন ট্রেডে আপনার লস অনেক বেশী হলেও চাইলে আপনি আপনার ট্রেডটিকে হোল্ড করতে পারবেন।

 

ট্রেডে আপনার অ্যাকাউন্টের মোট পার্সেনটেজের কম এবং বেশী রিস্ক নিয়ে ট্রেডের একটি উদাহরন নিচে দেখা যাক। দেখুন টানা ১০টি ট্রেডে লস আপনার অ্যাকাউন্টের কতটুকু ক্ষতি করতে পারে।

 

 

স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে ২% রিস্ক এবং ১০% রিস্কের মধ্যে পার্থক্য। কেউ সহজে টানা ১০টি ট্রেড হারেনা। যদিও আপনি সবচেয়ে খারাপ ট্রেড করেন, তবুও ২% রিস্ক নিলে আপনি ১০টি ট্রেডে হারলে আপনি আপনার ক্যাপিটালের ১৭% হারাবেন, যেখানে প্রতি ট্রেডে ১০% রিস্ক নিলে আপনি ১০টি ট্রেড হারলে আপনি আপনার ক্যাপিটালের ৬০% এর বেশী হারাবেন। সুতরাং, বুঝতে পারছেন মানি ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব। আপনি যদি ঠিকভাবে মানি ম্যানেজমেন্ট করতে না পারেন তবে আপনি ব্যাপক লসের সম্মুখিন হতে পারেন।

 

 

. হারান ক্যাপিটাল পুনরুদ্ধার করা কঠিনঃ

 

কেউ যদি তার অ্যাকাউন্টের কিছু অংশ হারায়, তাহলে তা পুনরুদ্ধার করা কতটা কঠিন?

 

 

আপনি যদি আপনার অ্যাকাউন্টের ৫০% হারান, তাহলে আপনাকে লস রিকভার করতে আপনার নতুন ব্যালেন্সের ১০০% লাভ করতে হবে। আর যদি ৭৫% হারান, তবে নতুন ব্যালেন্সের ৩০০% প্রফিট করতে হবে শুধুমাত্র পূর্বের লস রিকভার করার জন্য। তাই আপনি যদি একবার বিরাট লস করে তারপর সেই লস রিকভার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তবে প্রফিট করবে কে?

 

এখানেই চ্যালেঞ্জ। চেষ্টা করে দেখুন ডেমো অ্যাকাউন্টে ৩০০% অথবা আপনার রিয়েল অ্যাকাউন্টে অন্তত ১০০% প্রফিট করতে পারেন কিনা। এটা অতটা সহজ হবেনা। মানি ম্যানেজমেন্ট এই জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

৩. ট্রেড করার আগে রিস্কঃরিওয়ার্ড রেশিও হিসাব করুনঃ

 

যখন একটি ট্রেডে লস করার সম্ভবনা প্রফিট করার থেকে বেশী, তখন ট্রেড করা থেকে বিরত থাকুন। সবসময় ট্রেড করতে হবে এমন কোন কথা নেই।

 

উদাহরনসরূপঃ

১. ৪০ পিপস লস vs ৩০ পিপস প্রফিট

২. ২০ পিপস লস vs ২০ পিপস প্রফিট

 

২টি উদাহরনই বাজে রিস্ক ম্যানেজমেন্টের উদাহরন।

 

একটি ট্রেড ওপেন করার আগে এটা নিশ্চিত করুন যে রিস্ক:রিওয়ার্ড রেশিও অন্তত ১:২ (১:৩ রেশিও বা এর থেকে বেশী ভাল)।

এর মানে হচ্ছে আপনার এমন একটি ট্রেডই ওপেন করা উচিত যেটাতে আপনার লস করার সম্ভবনা থেকে লাভের সম্ভবনা ততগুন হবে। যেমনঃ আপনি ৩০ পিপস লস করার পরিপেক্ষিতে ১০০ পিপস লাভ করতে পারবেন এমন ট্রেডে এন্ট্রি করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

আপনি যদি মানি ম্যানেজমেন্টের এই রুলসটি সঠিকভাবে মেনে চলেন, তবে তা পরবর্তীতে আপনাকে সাফল্য পেতে এবং স্ট্যাবল প্রফিট পেতে সাহায্য করবে।

 

 

রিস্ক:রিওয়ার্ড রেশিওর নিচের চার্টটি দেখুন। এখানে ১:৩ রিস্ক:রিওয়ার্ড রেশিও নিয়ে ১০টি ট্রেড করা হয়েছে।

একজন যখন কোন ট্রেডে লস করে, তখন সে $১০০ ডলার হারিয়েছে। কিন্তু তার প্রতিটি প্রফিটেবল ট্রেডে সে $৩০০ ডলার প্রফিট করেছে।

 

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে কোন ট্রেডার যদি ১:৩ রিস্ক:রিওয়ার্ড রেশিও নিয়ে যদি ৫০% ট্রেডেও সফল হয়, তবুও সে ভাল পরিমান লাভ করতে পারে।