ইলিয়ট তরঙ্গের মূল ভিত্তিসমূহ

ইলিয়ট তরঙ্গের মূল ভিত্তিসমূহ

প্রতিটি পূর্ণ ইলিয়ট ওয়েব ৫টি ইম্পালসিভ তরঙ্গ দ্বারা গঠিত যা মূল ট্রেন্ড অনুসরণকারী ৩টি কারেক্টিভ তরঙ্গের দিকনির্দেশ করে। যাদের বলা হয় “৫-৩ পথ” ।
এই ৫-৩ গতিপথ যে কোন সময় ছকের ( M1, M5, M15 থেকে W1, M1 পর্যন্ত সব) জন্য সত্য।

bfs1

ইহা একটি উচ্চমুখী ট্রেন্ড যেখানেঃ

১-২-৩-৪-৫ হচ্ছে ইম্পালসিভ পথ, যেখানে তরঙ্গ ১-৩-৫ হচ্ছে ইম্পালসিভ তরঙ্গ এবং ২-৪ হচ্ছে কারেক্টিভ তরঙ্গ।

ক-খ-গ হচ্ছে কারেক্টিভ পথ, যেখানে ক-খ হচ্ছে ইম্পালসিভ তরঙ্গ এবং গ হচ্ছে কারেক্টিভ তরঙ্গ।

কিন্তু, এসব ইম্পালসিভ অথবা কারেক্টিভ বিষয়ের মানে কি ?
এগুলো বুঝতে হলে আমাদের যেতে হবে লেনদেনকারীদের আচরণ বিষয়ক বিবরণীতে এবং কিভাবে এগুলো ইলিয়ট অনুসারে কাজ করে।

তরঙ্গ ১ – ক্রেতাদের প্রথম দলের ইম্পালসিভ আশা প্রকাশ করে। তারা কেনার একটি ভাল কারণ খুজে পায় (ফান্ডামেন্টাল এবং টেকনিক্যাল কারণ).  আর তাই তারা মার্কেটকে উপরে উঠতে চাপ প্রয়োগ করে।

তরঙ্গ ২ – ইম্পালস তরঙ্গটি পরিবর্তিত হয়ে যায় কারণ আসল ক্রেতারা তাদের লেনদেন লাভ নিয়ে বন্ধ করে দেয়। যখন অন্য বিনিয়োগকারীরা, যারা এই সুযোগ নিতে পারেনি তারা নতুন সুযোগের আপেক্ষায় বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করে।

তরঙ্গ ৩ – সাধারণত সবচেয়ে লম্বা এবং শক্তিশালী তরঙ্গ। প্রত্যেক বিনিয়োগকারী যারা কিনতে চায় তারা ( যারা তরঙ্গ ১ এ সুযোগ হারিয়েছে এবং যারা সুযোগ পায়নি ) এখান থেকে কিনতে থাকে। আরও যোগ হয় তারা যারা তরঙ্গ ৩ এর মাঝে এসে সন্তুষ্ট হয় যে তরঙ্গটি উচ্চমুখী। সবকিছু মিলে একটি বড় বেগবৃদ্ধির মাধ্যমে এটি মূল ট্রেন্ডে পরিণত হয়।

তরঙ্গ ৪ – আগে হোক বা পরে হোক, এখন লাভ তুলে নেওয়ার সময়, এই ইম্পালসিভ পথ পুনরায় পরিবর্তিত হতে শুরু করে। যাইহোক, এই অগভীর পরিবর্তনের মাধ্যমে বোঝা যায় যে আরও ক্রেতা রয়েছে যারা এই ট্রেন্ডে যোগ দিতে চায়।

তরঙ্গ ৫ – তাই পুনরায় ট্রেন্ড উচ্চমুখী হওয়া শুরু করে, কিন্তু মার্কেট ক্রয়াধিক ( অত্যাধিক ক্রয়) হয়েছে এবং ইহা নিশ্চিত যে এখন একটি বিপরীত পরিবর্তন হবে। তরঙ্গ ৫ এর শেষ বোঝা যায় বিক্রয়াধিক ( অত্যাধিক বিক্রয় ) মার্কেট ( উচ্চমুখী ট্রেন্ডের মধ্যে ) এবং ডাইভারজেন্স দ্বারা।
ডাইভারজেন্স – এটি বলতে বুঝায় যে, মার্কেট উচ্চমুখী ট্রেন্ডে ক্রয়াধিক দেখা যাচ্ছে কিন্তু RSI ইন্ডিকেটরে বিপরীত দিক নির্দেশিত বিক্রয়াধিক দেখাচ্ছে। এতে বুঝা যায় যে উচ্চমুখী মার্কেট নিম্নগামী হবে। ( বিপরীতক্রমে নিম্নমুখী মার্কেটের ক্ষেত্রে উচ্চগামী )

তরঙ্গ ক, খ, গ – এই তরঙ্গগুলো তৈরী হয় প্রধান ট্রেন্ডের বিপরীত তরঙ্গের ট্রেন্ড পদ্ধতি হিসেবে। এই সময় নতুন ট্রেন্ড গঠিত হতে পারে আবার নাও হতে পারে এবং নতুন ১-২-৩-৪-৫-ক-খ-গ ক্রমানুসারে তরঙ্গগুলো শুরু হতে পারে।
ইলিয়ট তরঙ্গ এবং চক্রের প্রকারভেদঃ


ইহা খুব ভাল হতো যদি এই ৫-৩ তরঙ্গগুলো পেতাম এবং বিনিয়োগ করতাম, কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আমরা যখন মূল্য তালিকার দিকে তাকাই তখন এই রকম মসৃণ ৫-৩ তরঙ্গ পাওয়া যায় না, তার পরিবর্তে দেখা যায় গোলক ধাঁধার উপর নিচ পথের মত। এখন আপনি কি করবেন?
ইলিয়ট তরঙ্গ তত্ত্ব বলে যে প্রত্যেক তরঙ্গই ছোট ছোট তরঙ্গ দ্ধারা গঠিত।

bfs2

যদি প্রত্যেক তরঙ্গই ছোট ছোট তরঙ্গের শ্রেণী দ্বারা গঠিত হয় তাহলে ছবিটি দেখতে এরকমঃ
bfs3

ইলিয়ট তরঙ্গের চক্রগুলো

ইলিয়ট তরঙ্গ অনুসারে একটি বড় তরঙ্গ তৈরী হয় প্রতিটি পূর্ণ ১-২-৩-৪-৫-ক-খ-গ তরঙ্গের সমাবেশে ( বড় তরঙ্গের একটি চক্র ) ।
bfs4

নিচে ইলিয়ট তরঙ্গ চক্রের একটি পরিচিত তালিকা এবং এদের বিভিন্ন প্রকারের নাম দেওয়া হলোঃ
তরঙ্গের প্রকার ৫ এর ট্রেন্ড ৩ এর বিপরীত ট্রেন্ড সময়ের পরিধি
সর্ব্বোচ্চ বৃহৎচক্র [[[[[[[[ [[ I] [II] [III] [IV] [V] [অ] [আ] [ই] শতাব্দী, যুগ
বৃহৎচক্র ( I) (II) (III) (IV) (V) (অ) (আ) (ই) যুগ, বাৎসরিক
চক্র I II III IV V অ আ ই বাৎসরিক, ত্রিমাসিক, মাসিক
প্রাথমিক [ ১] [২] [৩] [৪] [৫] [ক] [খ] [গ] ত্রিমাসিক, মাসিক, সপ্তাহিক, প্রতিদিন
মাধ্যমিক ( ১) (২) (৩) (৪) (৫) (ক) (খ) (গ) মাসিক, সপ্তাহিক, প্রতিদিন
গৌণ ১ ২ ৩ ৪ ৫ ক খ গ মাসিক, সপ্তাহিক, প্রতিদিন, ২৪০ মিনিট
মিনিট [ i] [ii] [iii] [iv] [v] [অ] [আ] [ই] সপ্তাহিক,প্রতিদিন,২৪০-৬০ মিনিট
মিনিটি ( i) (ii) (iii) (iv) (v) (অ) (আ) (ই) প্রতিদিন, ২৪০-৬০ মিনিট
উপমিনিটি i ii iii iv v অ আ ই ২৪০-৬০ মিনিট এবং আরও কম

টীকাঃ অনলাইন ট্রেডিং পদ্ধতিতে তৃতীয় বন্ধনীর পরিবর্তে গোলক চিহ্নও ব্যবহার করা হয়।

ফরেক্স ট্রেডে লস হওয়ার কারন সমূহ

ফরেক্স ট্রেডে লস হওয়ার কারন:

 

আমরা একথা অনেক শুনেছি যে, ফরেক্স যারা শুরু করেন তাদের শতকরা ৯৫ জনই তাদের প্রথম একাউন্ট হারান অর্থাত শুন্য হয়ে যান। কিন্তু কেন? কারন তারা ফরেক্সের বেসিক রুলস গুলো মেনে চলে না। দেখা যাক কি কি কারন ট্রেডাররা ফরেক্সে লস করে।

 

• অভিজ্ঞতার অভাবঃ প্রথম দৃষ্টিতে ফরেক্স কিন্তু সহজ মনে হয়। কারন যেহুতু লাভ অথবা লস, আন্দাজে ট্রেড করে অনেকেই প্রচুর লাভ করে ফেলে। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে রিয়েল ট্রেডিং করবে। কিন্তু আপনি লস না করলে কখন বুঝতে পারবেন না যে কিভাবে আপনি ঐ সকল অবস্থাগুলো পরে মোকাবেলা করবেন। সেজন্য আপনাকে অনেকদিন সিরিয়াসলি ডেমোতে ট্রেড করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ডেমোতে এত সময় ট্রেড করতে চায় না। সে ক্ষেত্রে সেন্ট অ্যাকাউন্টে ট্রেড করতে পারেন। ধরে রাখুন ফরেক্সে আপনার প্রথম ২টি ডিপোজিট আপনি হারাবেন। বুঝে ট্রেড করার চেষ্টা করুন। দেখবেন তখন ট্রেডিং অনেকটা সহজ লাগবে।

• সিগন্যালের ওপর নির্ভরশীলতাঃ অধিকাংশ ট্রেডার সিগন্যালের ওপর নির্ভরশীল। বন্ধুদের কথায় বা অপরিচিত লোকের কথায় ট্রেড করে। নিজে কোন অ্যানালাইসিস না করে কেউ বাই করতে বললেই বাই করে, সেল করতে বললে সেল করে। পরিনামে লস। আবার কেউ কেউ তো $১০০-$২০০ দিয়ে সিগন্যালও কিনে থাকেন। কিন্তু একটা কথা ভাবুন, যদি সিগন্যাল গুলো আসলেই সবসময় পারফেক্ট হত, তাহলে কেন সিগন্যাল প্রভাইডার তা বিক্রয় করছে? সে নিজে ট্রেড করেই তো বিল গেটস হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, কারো কোন কথা শুনে বা চার্ট দেখে ঝোঁকের বসে ট্রেড করবেন না। নিজে যা বুঝেন, তা দিয়ে ট্রেড করার চেষ্টা করুন। আরও শেখার চেষ্টা করুন। অন্যদের জিজ্ঞেস করুন।

• উদ্দেশবিহীন ট্রেডিং করাঃ অধিকাংশ ট্রেডার জানে না যে বাই করতে হবে না সেল করতে হবে। প্রাইস একটু বেড়ে গেলেই তারা মনে করে যে এটা আবার কমবে, তখন সেল ট্রেড দিয়ে বসে। এভাবে ট্রেড করলে আজীবনই লস খাবেন। মার্কেট অ্যানালাইসিস করতে চেষ্টা করুন। বিডিপিপস ফরেক্স স্কুলের ইন্ডিকেটর সেকশনে দেখুন কিছু বেসিক ইন্ডিকেটর সম্পর্কে দেয়া আছে। এগুলো এবং সাথে অন্য ইন্ডিকেটর নিয়ে গবেষনা করুন। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের কিছু কিছু জিনিস শেখার চেষ্টা করুন। আস্তে আস্তে সব কিছুই আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে।

• বড় রিস্ক নিয়ে ট্রেড করাঃ অধিকাংশ মানুষ ফরেক্সকে মানি মেকিং মেশিন মনে করে। মনে করে ফরেক্সে ১ দিনেই ব্যালেন্স দ্বিগুণ করা যায়। অধিকাংশ ট্রেডার তার ক্যাপিটালের অনুপাতে অনেক বড় রিস্ক নিয়ে ট্রেড করে। দেখা যায় অ্যাকাউন্টে $১০০ আছে, কিন্তু $১ পিপস ভ্যালুর ট্রেড ওপেন করে বসে আছে। ১০০ পিপস আপনার বিপরিতে মুভ করলেই আপনি ফকির হয়ে যাবেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিন, মানি ম্যানেজমেন্ট করতে শুরু করুন।

• ট্রেডিং স্ট্রাটেজি না থাকাঃ আপনার অবশ্যই একটি ট্রেডিং স্ট্রাটেজি থাকা উচিত। আপনি কিভাবে ট্রেড করবেন, কত পিপস স্টপ লস বা টেক প্রফিট ব্যবহার করবেন, কত ভলিউমে ট্রেড করবেন সবকিছু আগে থেকেই সেট করে রাখা উচিত। এবং আপনার সব ট্রেডেই তা ফলো করা উচিত। তা নাহলে দেখা যাবে একটি ট্রেডে আপনার প্রফিট ৫০ পিপসে $৫, আরেকটি বড় রিস্ক নিয়ে করা ট্রেডে লস ৫০ পিপসে $৫০. তাই সবার প্রথমে আপনার ট্রেডিং স্ট্রাটেজি তৈরি করুন। অন্যদের ট্রেডিং স্ট্রাটেজি দেখুন, তারপর যেটা ভাল লাগে, পরিবর্তন করে নিজের পছন্দমত নিজের ট্রেডিং সিস্টেম তৈরি করুন।

• নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকাঃ অনেক ট্রেডার অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে। তারা মনে করে প্রাইস এখন বাড়বে বা কমবে এবং সেই অনুসারে ট্রেড করে কোন প্রকার অ্যানালাইসিস ছাড়া। কিন্তু মানুষই মানুষের শত্রু। নিজেকে বিশ্বাস করবেন না। মার্কেট কি বলে তা দেখুন।

লস ঠেকাতে এই কথাগুলো মনে রাখবেনঃ

• লোভ করবেন না

• ইমোশনাল হবেন না

• নিজের মনগড়া সিদ্ধান্তে ট্রেড করবেন না

• মানি ম্যানেজমেন্ট ফলো করে ট্রেড করবেন

• ট্রেডিং স্ট্রাটেজি মেনে চলবেন

• অ্যানালাইসিস ছাড়া কোন ট্রেড করবেন না