Hawkish শব্দটি এসেছে ইংরেজি Hawk থেকে যার অর্থ বাজপাখি। শিকারের উপর বাজপাখি যেভাবে আক্রমণাত্মক বা আগ্রাসীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ঠিক সেভাবেই মাঝে মাঝে আগ্রাসী অবস্থানে যেতে হয় কেন্দ্রিয় ব্যাংকেও।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগ্রাসী মনোভাব (সুদের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে) বা কণ্ঠস্বরকেই বলা হয় Hawkish বা Hawkish Tone, ফরেক্স মার্কেটে ফান্ডামেন্টাল আনালাইসিস করার জন্য যা এখন আপনার জানার একান্তই প্রয়োজন।
সাথে জেনে রাখুন Dovish কি তাও। Hawkish এর বিপরীত শব্দটিই হচ্ছে Dovish যা এসেছে ইংরেজি শব্দ Dove বা শান্তির প্রতীক পায়রা থেকে
বিভিন্ন অবস্থার পরিপেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। আর এমনটা প্রায়শই হয় যে নতুন যে পদক্ষেপটা তারা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তা পূর্বেরটার উল্টো।
ধরুন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে। আর তার সাথে যেটা বাড়ছে, তা হল বাজারে অর্থের প্রবাহ।
আর সমস্যার সূত্রপাতটা এখানেই। কারন যখনই বাজারে অর্থের প্রবাহ বেশী হয়ে যায়, তা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় বা মূল্যস্ফীতি তৈরি করে। এই মূল্যস্ফীতি একটি সহনীয় পর্যায়ে থাকলে তা তেমন সমস্যা তৈরি করে না, কারন মানুষের আয়ও বাড়ছে। কিন্তু, যখনই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখনই তা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর এর সমাধান হচ্ছে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানো। তা কিভাবে সম্ভব?
এটা সম্ভব যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার হার কমবে এবং ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার হার আরও বাড়বে। অর্থাৎ, যে অর্থ ব্যাংক থেকে বাজারে স্থানান্তরিত হচ্ছিল, তা আবার বাজার থেকে ব্যাংকে ফেরত যাচ্ছে। আর বাজারে অর্থের সরবরাহ কমার কারনে জিনিসপত্রের মূল্যও কমবে।
চিন্তা করে দেখুন, সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়ায় না হয় মূল্যস্ফীতি কমল। কিন্তু, এর ফলে কি শিল্পকারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণ করা কঠিন হয়ে গেলো না? এর একটা প্রভাবও তো দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। অর্থনীতির চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে যাবে ও প্রবিদ্ধি কমতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি এটা জানে না?
অবশ্যই জানে। কিন্তু, কিছু করার নেই।
একটা কথা আছে, অবস্থার ভিত্তিতে ব্যাবস্থা। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের বৈঠকে নীতিনির্ধারকরা একত্রে বসে আলোচনা করেন, কোনটি বেশি জরুরি। মূল্যস্ফীতি কমানো নাকি অর্থনীতির চাকা আরো সচল করা?
যদি এমন হয় যে, অর্থনীতি খুব ভালো অবস্থানে আছে এবং মূল্যস্ফীতিও সহনীয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আর যদি এমন হয় যে, অর্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে কিন্তু মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মূল্যস্ফীতি কমানোটাই বেশি অগ্রাধিকার পায়। সেক্ষেত্রে, বৈঠকের বিবৃতিগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমানোটাই প্রধান বিষয় হয়ে দাড়ায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এরকম অবস্থানকে বলা হয় Hawkish, এ ধরনের বিবৃতিকে বলা হয় Hawkish Statement এবং অনেকে বক্তব্যের সুরকে Hawkish টোন ও বলে থাকেন। এককথায়, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার যখন জোরালো আশঙ্কা থাকে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন বিবৃতিকে Hawkish বলতে বোঝায় মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, বাড়তে পারে সুদের হার।
ঠিক উল্টোভাবেই যখন অর্থনীতির অবস্থা খারাপ থাকে, তখন কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে অগ্রাধিকার পায় সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল করা। মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এরকম অবস্থানকে বলা হয় Dovish, এ ধরনের বিবৃতিকে বলা হয় Dovish Statement এবং অনেকে বক্তব্যের সুরকে Dovish টোন ও বলে থাকেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন দেশের অর্থনীতিক সমস্যা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা করে এবং এ থেকে উদ্ধারের জন্য যখন সুদের হার বাড়ানোর কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না, এমনকি সুদের হার আরো কমার আশংকা থাকে তখন তাকে Dovish বলা হয়।
কেন জানা গুরুত্বপূর্ণ?
কারন Hawkish বা Dovish, একটি শব্দ দ্বারাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি করতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে, তা সম্পর্কে ধারনা করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেকোনো Hawkish বা Dovish বিবৃতি মার্কেটের উপর সরাসরি বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
যেমন ধরুন, FED কি মূল্যস্ফীতি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত? খুব বেশি আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে বৈঠকে? ফেডের বৈঠকের বিবৃতি থেকে যদি এমন কোন ধারনা পাওয়া যায় যে, সুদের হার বাড়িয়ে ফেড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে ফেডের এ Hawkish টোন ট্রেডারদের মাঝে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে ও ডলার শক্তিশালী হবে। কারন, সুদের হার বাড়া মানেই কারেন্সি শক্তিশালী হওয়া।
প্রফেশনাল ট্রেডারদের কাছে তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বৈঠকের ভাষা (Hawkish/Dovish) সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।