ব্রোকার সিলেক্ট এর আগে যেসব বিষয় দেখবেন

ফরেক্স ট্রেডিং এর একটি অপরিহার্য অংশ হচ্ছে ব্রোকার । ব্রোকার এর কারনে আপনার ট্রেডিং কিছুটা হলেও মাঝে মাঝে প্রভাবিত হতে পারে । তাই ব্রোকার  সিলেক্ট করার আগে কতগুলো বিষয় মনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। ব্রোকারের প্রধান আয় হচ্ছে স্প্রেডএর মাধ্যমে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্রোকার ট্রেডারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েও লাভ করে। কথিত আছে ফরেক্স মার্কেটে ৯০%  ট্রেডার তাদের প্রথম  একাউন্ট হারায়  বা একাউন্ট জিরো করে ফেলে  । তাই ব্রোকাররা প্রথম একাউন্ট রেজিস্টার কারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিলে বেশিরভাগ সময় তাদের লাভ হয়।

প্রথমেই কথা বলা যাক, ডিলিং ডেস্ক  এবং  নো ডিলিং ডেস্ক নিয়েঃ 

ব্রোকার স্ট্রাকচার দুরকম । একটা হচ্ছে – ডিলিং ডেস্ক যেখানে প্রতিটা অর্ডার পূর্ণ হবার আগে ডিলিং ডেস্কে গিয়ে যাচাই করে পূর্ণ হয়।

আরেকটা হচ্ছে নো ডিলিং ডেস্ক যেখানে কোন ডিলিং ডেস্ক থাকে না, আপনার অর্ডার প্রাইসের সাথে ম্যাচ থাকলেই অটোমেটিক রিকোয়েস্ট পূর্ণ হয়ে যাবে। মাঝখানে কোন ডিলার থাকবে না।

মাঝখানে ডিলার থাকলে প্রাইস ম্যানিপুলেট করা যায়।

ধরা যাক আপনি জিবিপি  ইউএসডি ১.৩৫৪৪ রেটে বাই চাপ দিলেন। ট্রেড সার্ভারে পৌছাতে পৌছাতে প্রাইস চেঞ্জ হয়ে গেল। প্রাইস চেঞ্জ হওয়া মানে পূর্বের প্রাইসে আর কোন সেলার নেই। এই অবস্থায় ব্রোকার নিজেই সেলার হয়ে আপনার রিকুয়েস্ট পূর্ন করে দিবে।

পরবর্তীতে যখন সেল করে দিতে সেল বাটন চাপ দিবেন, তখন ডিলিং ডেস্কে গিয়ে যদি দেখা যায় ঐ রেটে কোন বায়ার নেই তাহলে ডিলিং ডেস্ক আপনাকে আরেকটা প্রাইস পাঠাবে যে প্রাইসে আপনি সেল করতে ইচ্ছক কিনা জানতে চাইবে। এটাকে বলে Requote। এর ফলে লাভের পরিমাণ কমে যায় বা লসের পরিমান বেড়ে যায়।

কিন্তু নো ডিলিং ডেস্কে আপনি অর্ডার দিলে প্রাইসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুভমেন্টেও আপনার অর্ডার কাছাকাছি প্রাইসে পূর্ণ হয়ে যাবে। যেমন আপনি পূর্বের উদাহরন অনুযায়ী ১.৩৫৪৪০ রেটে বাই দিলেন। যদি ঐ রেটেও সেলার না থাকে তবে কাছাকাছি রেটে যেমন ১.৩৫৪৪২ অর্ডার পূর্ণ হয়ে যাবে। এবং একই ভাবে সেল করার সময় কাছাকাছি প্রাইসে সেল হয়ে যাবে ফলে Requote এর কোন চান্স নেই।

নো ডিলিং ডেস্কের আরেকটা সুবিধা হল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুভমেন্টের সুবিধা। সেজন্য সব নো ডিলিং ডেস্ক ব্রোকারের প্রাইস ফিফথ ডেসিমাল হয় (মানে দশমিকের পর ৫টা সংখ্যা)।

যেমন GBP/USD 1.35442/1.35450

ফিফথ ডেসিমেলে হওয়ায় স্প্রেড কমে যায়। অন্য ব্রোকারে সাধারণত GBP/USD স্প্রেড হয় ২-৩ পিপ সেখানে নো ডিলিং ডেস্ক ব্রোকারে স্প্রেড হয় ০.৮ -১.৮ পিপ।

নো ডিলিং ডেস্কে ফিক্সড স্প্রেড নেই, এখানে স্প্রেড ভ্যারিয়েবল। অর্থাৎ,  অর্ডারের চাপের উপর স্প্রেড নির্ভর করে। অর্ডার বেশি হলে স্প্রেড বাড়িয়ে দেয়া হয়। যেমন নিঊজ পাব্লিশের সময়। আবার অর্ডারের প্রেশার কম থাকলে স্প্রেড কম থাকে।

ডিলিং ডেস্ক ব্রোকারকে Market Maker / Stop Loss Hunter Broker ও বলা হয়।

জনপ্রিয় কয়েকটি ডিলিং ডেস্ক ব্রোকার হচ্ছে -eToro, LiteForex, UWCFX, Avafx

নো ডিলিং ডেস্ক ব্রোকার ECN (Electronic Communication Network) / STP (Straight Through Processing) ব্রোকারও হতে পারে।

জনপ্রিয় কয়েকটি নো ডিলিং ডেস্ক ব্রোকার হচ্ছে – Pepperstone, FxPro, HotForex, Roboforex,

 এবার রেগুলেশনঃ 

ফরেক্স মার্কেট যদিও রেগুলেটেড নয় কিন্তু ব্রোকারের কার্যক্রম রেগুলেশন করা হয়। রেগুলেটেড ব্রোকারের দুই নাম্বারী করার সুযোগ থাকে না। কারন রেগুলেশন অথরিটির কাছে তাদের জবাবদিহিতা থাকে। তাই অবশ্যই রেগুলেটেড ব্রোকারে ট্রেড করবেন।

ডকুমেন্টস

আজকাল ফরেক্স এর নামে অনেক জায়গায় দেখা যায় মানি লন্ডারিং করতে । তাই,  এন্টি মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী ব্রোকাররা শুধুমাত্র গ্রাহকের নাম থেকেই টাকা নিতে পারে এবং ঐ নামেই টাকা ফেরত দিতে পারে, কোন ৩য় ব্যক্তির মাধ্যমে নয়। তাই গ্রাহকের নাম ঠিকানা ভেরিফাই করার জন্য গ্রাহকের ডকুমেন্টস ব্রোকার কে পাঠাতে হয়। নাম ভেরিফাই করার জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ডের / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যানড কপি এবং এড্রেস ভেরিফাইয়ের জন্য আপনার নাম ঠিকানা সম্বলিত ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট / টেলিফোন বিল / বিদ্যুৎ বিল এর স্ক্যানড ফটোকপি পাঠাতে হবে।

যদি কোন ব্রোকা্রে ডকুমেন্টস ভেরিফাই এর দরকার না হয় তাহলে মনে করবেন ঐ ব্রোকার ভুয়া। কারণ সব গ্রাহকের ডকুমেন্টস ভেরিফাই করে রেকর্ড করে রাখা সরকারী আইন। ঐ ব্রোকার নিশ্চিত আইন ভংগ করছেন।

অনলাইন রিভিওঃ 

সবশেষে ফাইনাল ডিসিশন নেয়ার আগে অনলাইনে বিভিন্ন সাইট থেকে ব্রোকার রিভিও পড়ে নিতে পারেন। ব্রোকারের নাম + রিভিও লিখে গুগলে সার্চ করলে প্রচুর সাইট পাবেন।

যেমন – Exness broker Review.

ওখানে বর্তমান গ্রাহকদের রিভিও পড়ে দেখুন। Instant Execution, Faster Withdrawal , No Requotes , Good Customer Service এগুলো থাকলে বুঝবেন ভাল ব্রোকারই সিলেক্ট করেছেন।

forexpeacearmy.com হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রোকার রিভিও সাইট। এছাড়া ও বিভিন্ন সাইট আছে যেখানে ব্রোকার সম্পর্কে রিভিও পাবেন, একটু সময় লাগলেও কষ্ট করে দেখবেন, এতে সেই ব্রোকার এর বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা দুটো ই পেয়ে যাবেন ।