স্টপ লস এবং টেক প্রফিট কি?

ফরেক্স ট্রেডিং এ স্টপ লস এবং টেক প্রফিট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। সফল ট্রেডারদের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে তারা স্টপ লস এবং টেক প্রফিট ব্যবহার করে।

স্টপ লস (stop loss): স্টপ লসের মাধ্যমে আপনি আপনার লসে থাকা ট্রেডটি কোন প্রাইস এ বন্ধ করে দিতে চান তা ঠিক করে দিতে পারবেন।

টেক প্রফিট (take profit): টেক প্রফিটের মাধ্যমে আপনি আপনার লাভে থাকা ট্রেডটি কোন প্রাইসে বন্ধ করে দিতে চান তা ঠিক করে দিতে পারবেন।

ধরুন, আপনি 1.2100 তে একটি বাই ট্রেড ওপেন করলেন। আপনি চাচ্ছেন 50 পিপস লাভ করবেন এবং 50 পিপসের বেশি লস করবেন না। তাহলে আপনি 50 পিপস স্টপ লস এবং 50 পিপস টেক প্রফিট সেট করে রাখতে পারেন। আপনার কম্পিউটার বন্ধ থাকলে বা কোন স্পাইকের ফলে হঠাৎ প্রাইস বেড়ে বা কমে গেলে, স্টপ লস বা টেক প্রফিটের প্রাইসে অটোমেটিক ভাবে আপনার ট্রেড ক্লোজ হয়ে যাবে।

সেক্ষেত্রে , আপনার স্টপ লসটি হবে 1.2050 এ এবং টেক প্রফিট টি হবে 1.2150 এ।

এ বিষয়ে সামনে আরো বিস্তারিত লেখা হবে। ভাল লাগলে শেয়ার করবেন। কোন প্রশ্ন থাকল কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

আরো পড়ুন

স্ক্যাল্পিং কি?

ট্রেইলিং স্টপ কি?

ফরেক্স ট্রেডে লস হওয়ার কারন সমূহ

ফরেক্স ট্রেডে লস হওয়ার কারন:

 

আমরা একথা অনেক শুনেছি যে, ফরেক্স যারা শুরু করেন তাদের শতকরা ৯৫ জনই তাদের প্রথম একাউন্ট হারান অর্থাত শুন্য হয়ে যান। কিন্তু কেন? কারন তারা ফরেক্সের বেসিক রুলস গুলো মেনে চলে না। দেখা যাক কি কি কারন ট্রেডাররা ফরেক্সে লস করে।

 

• অভিজ্ঞতার অভাবঃ প্রথম দৃষ্টিতে ফরেক্স কিন্তু সহজ মনে হয়। কারন যেহুতু লাভ অথবা লস, আন্দাজে ট্রেড করে অনেকেই প্রচুর লাভ করে ফেলে। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে রিয়েল ট্রেডিং করবে। কিন্তু আপনি লস না করলে কখন বুঝতে পারবেন না যে কিভাবে আপনি ঐ সকল অবস্থাগুলো পরে মোকাবেলা করবেন। সেজন্য আপনাকে অনেকদিন সিরিয়াসলি ডেমোতে ট্রেড করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ডেমোতে এত সময় ট্রেড করতে চায় না। সে ক্ষেত্রে সেন্ট অ্যাকাউন্টে ট্রেড করতে পারেন। ধরে রাখুন ফরেক্সে আপনার প্রথম ২টি ডিপোজিট আপনি হারাবেন। বুঝে ট্রেড করার চেষ্টা করুন। দেখবেন তখন ট্রেডিং অনেকটা সহজ লাগবে।

• সিগন্যালের ওপর নির্ভরশীলতাঃ অধিকাংশ ট্রেডার সিগন্যালের ওপর নির্ভরশীল। বন্ধুদের কথায় বা অপরিচিত লোকের কথায় ট্রেড করে। নিজে কোন অ্যানালাইসিস না করে কেউ বাই করতে বললেই বাই করে, সেল করতে বললে সেল করে। পরিনামে লস। আবার কেউ কেউ তো $১০০-$২০০ দিয়ে সিগন্যালও কিনে থাকেন। কিন্তু একটা কথা ভাবুন, যদি সিগন্যাল গুলো আসলেই সবসময় পারফেক্ট হত, তাহলে কেন সিগন্যাল প্রভাইডার তা বিক্রয় করছে? সে নিজে ট্রেড করেই তো বিল গেটস হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, কারো কোন কথা শুনে বা চার্ট দেখে ঝোঁকের বসে ট্রেড করবেন না। নিজে যা বুঝেন, তা দিয়ে ট্রেড করার চেষ্টা করুন। আরও শেখার চেষ্টা করুন। অন্যদের জিজ্ঞেস করুন।

• উদ্দেশবিহীন ট্রেডিং করাঃ অধিকাংশ ট্রেডার জানে না যে বাই করতে হবে না সেল করতে হবে। প্রাইস একটু বেড়ে গেলেই তারা মনে করে যে এটা আবার কমবে, তখন সেল ট্রেড দিয়ে বসে। এভাবে ট্রেড করলে আজীবনই লস খাবেন। মার্কেট অ্যানালাইসিস করতে চেষ্টা করুন। বিডিপিপস ফরেক্স স্কুলের ইন্ডিকেটর সেকশনে দেখুন কিছু বেসিক ইন্ডিকেটর সম্পর্কে দেয়া আছে। এগুলো এবং সাথে অন্য ইন্ডিকেটর নিয়ে গবেষনা করুন। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের কিছু কিছু জিনিস শেখার চেষ্টা করুন। আস্তে আস্তে সব কিছুই আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে।

• বড় রিস্ক নিয়ে ট্রেড করাঃ অধিকাংশ মানুষ ফরেক্সকে মানি মেকিং মেশিন মনে করে। মনে করে ফরেক্সে ১ দিনেই ব্যালেন্স দ্বিগুণ করা যায়। অধিকাংশ ট্রেডার তার ক্যাপিটালের অনুপাতে অনেক বড় রিস্ক নিয়ে ট্রেড করে। দেখা যায় অ্যাকাউন্টে $১০০ আছে, কিন্তু $১ পিপস ভ্যালুর ট্রেড ওপেন করে বসে আছে। ১০০ পিপস আপনার বিপরিতে মুভ করলেই আপনি ফকির হয়ে যাবেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিন, মানি ম্যানেজমেন্ট করতে শুরু করুন।

• ট্রেডিং স্ট্রাটেজি না থাকাঃ আপনার অবশ্যই একটি ট্রেডিং স্ট্রাটেজি থাকা উচিত। আপনি কিভাবে ট্রেড করবেন, কত পিপস স্টপ লস বা টেক প্রফিট ব্যবহার করবেন, কত ভলিউমে ট্রেড করবেন সবকিছু আগে থেকেই সেট করে রাখা উচিত। এবং আপনার সব ট্রেডেই তা ফলো করা উচিত। তা নাহলে দেখা যাবে একটি ট্রেডে আপনার প্রফিট ৫০ পিপসে $৫, আরেকটি বড় রিস্ক নিয়ে করা ট্রেডে লস ৫০ পিপসে $৫০. তাই সবার প্রথমে আপনার ট্রেডিং স্ট্রাটেজি তৈরি করুন। অন্যদের ট্রেডিং স্ট্রাটেজি দেখুন, তারপর যেটা ভাল লাগে, পরিবর্তন করে নিজের পছন্দমত নিজের ট্রেডিং সিস্টেম তৈরি করুন।

• নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকাঃ অনেক ট্রেডার অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে। তারা মনে করে প্রাইস এখন বাড়বে বা কমবে এবং সেই অনুসারে ট্রেড করে কোন প্রকার অ্যানালাইসিস ছাড়া। কিন্তু মানুষই মানুষের শত্রু। নিজেকে বিশ্বাস করবেন না। মার্কেট কি বলে তা দেখুন।

লস ঠেকাতে এই কথাগুলো মনে রাখবেনঃ

• লোভ করবেন না

• ইমোশনাল হবেন না

• নিজের মনগড়া সিদ্ধান্তে ট্রেড করবেন না

• মানি ম্যানেজমেন্ট ফলো করে ট্রেড করবেন

• ট্রেডিং স্ট্রাটেজি মেনে চলবেন

• অ্যানালাইসিস ছাড়া কোন ট্রেড করবেন না

কিভাবে ফরেক্সে লাভ/লস হয় ?

ফরেক্স মার্কেটে আপনি বাই (buy) অথবা সেল (sell) করবেন।

একটি ট্রেড খোলা খুবই সোজা। ট্রেড খোলার পদ্ধতি সহজ এবং আপনার যদি স্টক মার্কেটে ট্রেড করার অভিজ্ঞতা থাকে তবে আপনি তা আর তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন।

মনে করুন আপনি ১.১৮০০ এক্সচেঞ্জ রেটে EUR/USD – তে ১০,০০০ ইউরো কিনলেন $১১,৮০০ ডলার দিয়ে। দুই সপ্তাহ পর EUR/USD এক্সচেঞ্জ রেট বেড়ে ১.২৫০০ হল। তখন আপনি $১২,৫০০ ডলারে তা বিক্রি করলে আপনার লাভ হবে $৭০০ ডলার।

এক্সচেঞ্জ রেট হল একটি কারেন্সির সাপেক্ষে আরেকটি কারেন্সির দামের অনুপাত। যেমনঃ USD/CHF এর এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে, কত ইউ. এস. ডলার এর বিনিময়ে ১ সুইস ফ্রাঙ্ক কেনা যাবে, অথবা ১ ইউ. এস. ডলার কিনতে কত সুইস ফ্রাঙ্ক প্রয়োজন।

কিভাবে ফরেক্স কোটেশন পড়তে হয়

প্রতিটি ট্রেডে আপনি একই সাথে একটি কারেন্সি কিনেন এবং আরেকটি বিক্রি করেন। তাই ফরেক্স মার্কেটে কারেন্সি পেয়ারের দাম কোটেশন এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

EUR/USD এর ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট নিম্নরূপঃ

 

স্লাশ (/) এর আগের কারেন্সিকে বলা হয় বেস (base) কারেন্সি এবং স্লাশ (/) এর পরের কারেন্সিকে বলা হয় কোট (quote) কারেন্সি।

এখানে EU Rহল বেস (base) কারেন্সি এবং USD হল কোট (quote) কারেন্সি।

বাই (buy) করার সময়, এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি কেনার জন্য কত ইউনিট কোট কারেন্সি দিতে হবে। উদাহারনস্বরূপঃ ১ ইউরো কেনার জন্য ১.২৪৬০ ইউ. এস. ডলার দিতে হবে।

সেল (sell) করার সময়, এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি সেল করলে কত ইউনিট কোট কারেন্সি পাওয়া যাবে। উদাহারনস্বরূপঃ ১ ব্রিটিশ পাউন্ড বিক্রি করলে আপনি ১.২৪৬০ ইউ. এস. ডলার পাবেন।

বেস কারেন্সি হল বাই ও সেল এর মূল ভিত্তি। যদি আপনি EUR/USD বাই করেন, তবে আপনি বেস কারেন্সি EUR কিনছেন এবং একই সাথে কোট কারেন্সি USD বিক্রি করছেন। সহজ কথায়, EUR কেনা, USD বিক্রি করা।

আপনি কারেন্সি পেয়ারটি বাই করবেন যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে, কোট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি শক্তিশালী হবে। এর আপনি সেল করবেন যদি আপনি মনে করেন কোট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি দুর্বল হয়ে যাবে।

লং/সর্ট (long/short):

প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি বাই করবেন না সেল করবেন।

আপনি যদি বাই করতে চান (বেস কারেন্সি কেনা এবং কোট কারেন্সি বিক্রি করা), তার মানে আপনি চাচ্ছেন বেস কারেন্সির দাম বেড়ে যাক এবং আপনি সেটা বিক্রি করে দিবেন আরও বেশি দামে। ট্রেডারদের ভাষায় একে বলে লং (long) অথবা লং পজিশন নেয়া। মনে রাখবেন, লং = বাই (long = buy)।

আপনি যদি সেল করতে চান (বেস কারেন্সি বিক্রি করা এবং কোট কারেন্সি কেনা), তার মানে আপনি চাচ্ছেন বেস কারেন্সির দাম কমে যাক এবং আপনি সেটা কিনবেন আরও কম দামে। ট্রেডারদের ভাষায় একে বলে শর্ট (short) অথবা শর্ট পজিশন নেয়া। মনে রাখবেন, শর্ট = সেল(short= sell)।

 

বিড/আস্ক (bid/ask):

 

 

সব ফরেক্স কোটেশনে ২ টি প্রাইস দেখান হয়। বিড এবং আস্ক। প্রায় সবক্ষেত্রে বিড প্রাইস, আস্ক প্রাইস থেকে কম হয়।

বিড হল এমন একটি প্রাইস যে দামে ব্রোকার কোট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি কিনতে চায়। অর্থাৎ, সেল করার জন্য বিড হল সবচেয়ে ভাল প্রাইস।

আস্ক হল এমন একটি প্রাইস যে দামে ব্রোকার কোট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি বিক্রি করতে চায়। অর্থাৎ, বাই করার জন্য আস্ক হল সবচেয়ে ভাল প্রাইস।

বিড এবং আস্ক এর পার্থক্যই স্প্রেড (spread) নামে পরিচিত।

EUR/USD -র উপরের কোটেশনে বিড প্রাইস হল 1.3456 এবং আস্ক প্রাইস হল 1.3458.

অর্থাৎ, এখানে স্প্রেড 2 পিপস।

আপনি যদি সেল ক্লিক করেন তবে আপনি 1.3456 -এ সেল করবেন। আর যদি বাই ক্লিক করেন, তবে আপনি 1.3458 -এ বাই করবেন।