আপনি অনলাইনে কমোডিটি কিনতে চাইলে আপনাকে কোন একটি ব্রোকারের সহায়তা নিতে হবে যেটি কোন একটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সদস্য। এরকম অসংখ্য ব্রোকার রয়েছে। আজকাল ফরেক্স ব্রোকাররাও কমোডিটি ট্রেড করার সুবিধা দেয়, কেননা ট্রেডাররা স্মার্ট হচ্ছে। তারা এখন আর “All eggs in one basket” নীতিতে বিশ্বাসী না। যেহেতু, হাতের নাগালেই ট্রেড করার মত বিভিন্ন অপশন রয়েছে, তাই কোন ট্রেড ওপেন করার আগে তারা দেখতে চান, এই মুহূর্তে কোনটি ট্রেড করলে লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি। কোন কারেন্সি, নাকি কোন কমোডিটি? প্রশ্ন হচ্ছে, ফরেক্স ব্রোকাররা কিভাবে কমোডিটি কেনাবেচা করতে সহায়তা করে? যেসব ফরেক্স ব্রোকাররা কমোডিটি ট্রেড করার সুবিধা দেয়, তারা সাধারণত কোন না কোন কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সদস্য। এক্ষেত্রে, ব্রোকারের কাজ হল কমোডিটি বায়ার ও সেলারের মধ্যে মাধ্যম হিসেবে কাজ করা।
ব্রোকার চাইলে নিজেও কমোডিটি বাই সেল করতে পারে। এখন, আপনি যখন কোন কমোডিটি বাই করেন, যেমন ধরুন, স্বর্ণ কিনলেন, তখন আপনি তা ব্রোকার থেকে কিনলেন। এক্ষেত্রে, আপনি হচ্ছেন বায়ার আর ব্রোকার হচ্ছে সেলার। এখন, আপনার আর ব্রোকারের মধ্যে কমোডিটি বেচাকেনা কি শর্তে হচ্ছে, তা ব্রোকারের “Terms and Conditions” পড়লে বুঝতে পারবেন। বিভিন্ন ব্রোকারের নিয়ম বিভিন্ন রকম। যেমন ধরুন, সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, আপনি কোন কমোডিটি কেনার সময়েই ব্রোকারের সাথে আপনার চুক্তি হয়ে গেল যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তিতে একটি নির্দিষ্ট প্রাইসে আপনি কমোডিটি কিনছেন। ধরুন, এই সময়টি তিন মাস। তাহলে, তিন মাস পরে কি হবে? তিন মাস পরে আপনি ব্রোকারকে পুরো টাকা দিবেন আর ব্রোকার আপনাকে আপনার কমোডিটি দিয়ে দিবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রোকার এই কমোডিটি কোথা থেকে দিবে? সহজ উত্তর হচ্ছে, ব্রোকার আরেকজনের থেকে কিনে আপনাকে দিবে।
ব্রোকারের কাজই হচ্ছে বাই আর সেল করা। আপনার থেকে যা কিনবে, তা আরেকজনের কাছে বিক্রি করবে, আর আরেকজনের কাছ থেকে যা কিনবে, তা আপনার কাছে বিক্রি করবে। যেহেতু, প্রত্যেকটি ব্রোকারেরই অসংখ্য ক্লায়েন্ট থাকে, তাই ব্রোকার সহজেই আপনার কাছে কমোডিটি বিক্রি করার চুক্তি করলে আরেকজনের কাছ থেকে কমোডিটি কেনার চুক্তি করবে। এখন, তিন মাস পরে আপনি যে ব্রোকারকে পুরো টাকা দিবেন, তার নিশ্চয়তা কি? আর ব্রোকার যার থেকে কমোডিটি কিনবে, সেও যে সময়মত কমোডিটি ডেলিভারী করবে, তারও বা নিশ্চয়তা কি? তাই, ব্রোকার উভয়ের থেকেই একটি সিকিউরিটি ডিপোজিট রাখে। এটা সাধারণত যত টাকার কমোডিটি কিনবেন, তার উপর নির্ভর করে। যেমন, শতকরা ৫%। এটাকেই মার্জিন বলে। কিন্তু, এই সিকিউরিটি ডিপোজিট বা মার্জিন নেবার পরেও কিন্তু ব্রোকার ঝুঁকিতে আছে।
জানতে চান, কিভাবে? ধরুন, প্রতি আউন্স গোল্ড ১০০০ ডলার, এই রেটে আপনি ১ আউন্স গোল্ড কিনলেন ব্রোকার থেকে। শর্ত হচ্ছে, ব্রোকার এই গোল্ড ডেলিভারি দিবে ৩ মাস পরে। এখন, ৩ মাস পরে গোল্ডের দাম যাই থাকুক না কেন, ব্রোকার আপনাকে এই ১ আউন্স গোল্ড ডেলিভারি দিতে বাধ্য, আর আপনি বাধ্য ব্রোকারকে ১০০০ ডলার দিতে। ধরুন, ১ মাস পরে গোল্ডের দাম কমে দাঁড়ালো আউন্স প্রতি ৮০০ ডলারে। অর্থাৎ, আউন্সপ্রতি দাম ২০০ ডলার কমে গিয়েছে। এখন, ১০০০ ডলারের ৫% হিসেবে আপনি মার্জিন বা সিকিউরিটি ডিপোজিট দিয়েছেন মাত্র ৫০ ডলার। চুক্তি করেছেন, বাকিটা গোল্ড ডেলিভারির সময় নিবেন। উন্নত বিশ্বে, এই চুক্তির দাম আছে।
একবার চুক্তি করার পরে আপনি গোল্ড এই দামে নিতে বাধ্য। যদি, তিন মাস পরে গোল্ডের দাম কমে আউন্সপ্রতি ৫০০ ডলারও হয়ে যায়, তারপরেও আপনাকে ৫০০ ডলার বেশি দিয়ে হলেও ১০০০ ডলারেই নিতে হবে। ৫০ ডলার গেলে যাক, ব্রোকার থেকে গোল্ড নিবই না। এমনটা ভেবে যে এড়িয়ে যাবেন, তারও কোন উপায় নেই। ব্রোকার টাকা না পেলে মামলা করে দিবে আপনার নামে। আদালতে গেলে আপনি টাকা দিতেই হবে, তা নাহলে জেলে যেতে হবে। কিন্তু, যদি অনলাইনে এই গোল্ড কেনার চুক্তি করে থাকেন, অনেক দূরের কোন দেশের ব্রোকারের সাথে, তাহলে? ব্রোকার আপনাকে পাবে কোথায়? আপনি তো চাইলেই উধাও হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্রোকারকে তো ঠিকই এই ১ আউন্স গোল্ডের জন্য কাউকে না কাউকে ১০০০ ডলার দিতে হবে। তখন?
ব্রোকারদের বোকা ভাবার কোন কারন নেই। বরং, আমার আপনার থেকে অনেকগুন চালাক লোক আছে ব্রোকারে। তারাও এমন সিস্টেম বের করে রেখেছে যে, ব্রোকার এরকম কোন ঝুঁকিতে পড়বে না। সেটা কিভাবে? সহজ। আপনি যখনই ব্রোকারের সাথে গোল্ড কেনার অর্ডার দিচ্ছেন, তখনই তার মালিক আপনি। সিকিউরিটি ফি বা মার্জিন হিসেবে গোল্ডের পুরো দামের একটি অংশ ব্রোকারকে দিয়েছেন, বাকিটা দিবেন ডেলিভারির পরে। এখন, যদি গোল্ডের দাম আউন্সপ্রতি ১০০ ডলার বাড়ে, তাহলে আপনি যে এক আউন্স গোল্ডের মালিক, তার দাম এখন আর ১০০০ ডলার না, ১১০০ ডলার। ব্রোকারের কাছে চাইলেই আপনি যেকোন সময় এই কেনা গোল্ড আবার বিক্রি করে দিতে পারবেন ডেলিভারির আগেই।
সেক্ষেত্রে, ব্রোকার তার ফি কেটে রেখে আপনাকে আপনার লাভ বুঝিয়ে দিবে। অর্থাৎ, আপনার অ্যাকাউন্ট এ ৯৮ ডলার যোগ হয়ে যাবে, সাথে মার্জিন হিসেবে যে টাকা কেটে রাখা হয়েছিল, তাও ফেরত দেয়া হবে। (ধরলাম, ব্রোকারের ফি হচ্ছে আউন্সপ্রতি ২ ডলার, ১০০ ডলার-২ ডলার=৯৮ ডলার)। কিন্তু, ব্রোকারে যে আরেকজনের থেকে আপনার জন্য গোল্ড কেনার কথা? চিন্তার কারন নেই, ব্রোকার আরেকজনের সাথে গোল্ড বেচার চুক্তি করে নিবে বর্তমান প্রাইস অনুসারে। সেক্ষেত্রে, এখন যে ব্রোকার থেকে গোল্ড কিনবে, সে কিনবে প্রতি আউন্স ১১০০ ডলার দরে, আর ব্রোকার তো আগেই ১০০০ ডলার দরে গোল্ড কিনার চুক্তি করে রেখেছে।
আর যদি দাম কমে? ধরুন, প্রতি আউন্স গোল্ডের মূল্য ৫০ ডলার কমে গেলো। আপনি মার্জিন দিয়েছেনও ৫০ ডলার। এখন যদি আরো কমে যায়, তাহলে তো আপনি পরে ওই গোল্ড আর না নিলে ব্রোকার বিপদে পড়বে। তাই, চুক্তিতে শর্ত দেওয়া থাকে যে এরকম ক্ষেত্রে ব্রোকার সাথে সাথেই বা তারও আগে আপনাকে ইনফর্ম করবে আরো ডিপোজিট দেওয়ার জন্য। এজন্যেই অ্যাকাউন্টে মার্জিন এর বাইরেও অতিরিক্ত অর্থ রাখতে হয়।
ব্রোকার সাথে কমোডিটি কেনার সময়েই আপনি চুক্তি করেছেন যে, কোন কারনে যদি দাম কমে যায় তাহলে আপনি আরো ডিপোজিট মানি দিবেন যাতে কোন অবস্থাতেই আপনার টোটাল ডিপোজিট মানি থেকে টোটাল লস বেশি না হয়। এমনটা হলেই, ব্রোকার সঙ্গে সঙ্গে আপনার জন্য বেশি দামে কেনা গোল্ড আবার বাজারে বাজারমূল্যে (কম দামে) বিক্রি করে দিবে, মানে আপনার ট্রেড ক্লোজ হয়ে যাবে। ব্রোকার তখন হিসাব করবে তার লস কত হল আর আপনি ডিপোজিট মানি মোট কত দিয়েছেন। আপনার দেয়া মোট ডিপোজিট মানি থেকে ব্রোকার তার লস আর ফি কেটে রেখে বাকি টাকা আপনাকে ফেরত দিবে।
এখন, ব্রোকারের লস আর ফি মিলিয়ে যদি সর্বমোট ১০০ ডলার হয় আর আপনার দেয়া ডিপোজিট মানিও ১০০ ডলারই হয়, তাহলে আপনি লস+ফি কেটে নেয়ার পরে কিছুই ফেরত পাবেন না। আর যেহেতু ব্রোকার সবসময়েই তার লস আপনার ডিপোজিট মানি থেকে বেশি হবার আগেই ট্রেড ক্লোজ করে দিবে, তাই ব্রোকারেরও লস হবার সম্ভাবনা নেই। (কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্রোকারও লসের সম্মুক্ষীন হতে পারে, সেটা আরেকদিন আলোচনা করব) কিছু কিছু ব্রোকার কমোডিটির ফিউচার কন্ট্রাকের ডেলিভারির তারিখের দিনে পন্য ডেলিভারি করে দেয় অথবা আপনাকে সুযোগ দেয় পন্য ডেলিভারি না নিয়ে লাভ বা লস যেটা হয়েছে, সেই টাকাটা নিয়ে নিতে। আর অনেক ব্রোকার তাদের ক্লায়েন্টদেরকে পন্য ডেলিভারীর বদলে ওই দিন ওই কমোডিটির যে মূল্য সেই অনুসারে লাভ বা লস বুঝিয়ে দেয়। ক্লায়েন্ট তখন ওই টাকা দিয়ে চাইলেই ওই পরিমান কমোডিটি বাজার থেকে কিনে নিতে পারে।
অনলাইন ব্রোকারগুলোর পক্ষে যেহেতু বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদেরকে পন্য ডেলিভারী দেওয়া সম্ভন হয় না, তাই তারা দ্বিতীয় পন্থাতেই কাজ করে। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ফিউচার কন্ট্রাক্টের মেয়াদ অনেক দীর্ঘ থাকে। ট্রেডাররা তাদের সুবিধামত তার আগেই ট্রেড ক্লোজ করে লাভ বা লস বুঝে নেয়। তাহলে বুঝতে পারলন, ব্রোকারদের মাধ্যমে কিভাবে আমরা কমোডিটি বেচাকেনা করে থাকি। অনেকে জানেন না, আসলে কিভাবে আমরা ফরেক্স ব্রোকারদের সাথে কারেন্সি বেচাকেনা করে থাকি।
আশা করি, এখন আপনি দুটোই বুঝতে পারেছেন। কমোডিটি ট্রেড করতে হলে আপনাকে আলাদা করে টেকনিক্যাল বা ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস শিখতে হবে না, এটা ফরেক্স ট্রেডিং এর মতই। তবে, বেশ কিছু বেসিক জিনিস জানা বেশ জরুরী। তা না হলে, আপনি সঠিকভাবে মানি ম্যানেজমেন্ট করতে সম্যসায় পড়বেন এবং ভুল ট্রেড ওপেন করবেন। এই নিয়েই লিখব পরবর্তীতে। সাথে আরো থাকবে কমোডিটি ট্রেডিং এর বিভিন্ন টিপস।