ইলিয়ট ওয়েভ দিয়ে কিভাবে ট্রেড করবেন?

ইলিয়ট ওয়েভ নিয়ে আমরা আগেই বেশ কিছু পোস্ট করেছি সেগুলোর লিংক নিচে দেয়া হলো পড়ে নিতে পারেন। এর দ্বারা আপনি এই আর্টিকেলটি আরো ভালভাবে বুঝতে পারবেন।

 

এবার চলুন আমরা জেনে নেই কিভাবে ইলিয়ট ওয়েভ দিয়ে ট্রেড করবো।  এই আর্টিকেলে, ইলিয়ট ওয়েভ ট্রেডের তিনটি উপায় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।  তার আগে  আপনাকে এন্ট্রি, স্টপ লস, এবং এক্সিট পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে হবে। ধরে নিন আপনি নির্দিষ্ট কোন প্রাইস সুইং থেকে নিজের ওয়েভ গননা করা শুরু করেছেন। সেটার পরে ছোট একটি রিট্রেসমেন্ট আসবে যা সাধারনত প্রথম ওয়েভের ৫০% এর বেশী ছাড়িয়ে যাবে না। এটা আসলে ইলিয়ট ওয়েভ ট্রেডের মৌলিক নিয়ম – দ্বিতীয় ওয়েভ প্রথম ওয়েভকে কখনো ছাড়িয়ে যাবে না। প্রাইস যদি ১০০% এরবেশী রিট্রেস করে তাহলে আপনার ওয়েভ গণনায় ভুল হয়েছে। তৃতীয় ওয়েভের শুরু অনেক শক্তিশালী বাই সিগন্যাল হবে। সাধারনত, সম্পূর্ণ চক্রে সবচেয়ে বড় ওয়েভ এটি হয়। দ্বিতীয় মৌলিক নিয়ম হচ্ছে চতুর্থ ওয়েভ কখনো প্রথম ওয়েভের প্রাইসের সীমানার মধ্যে যাবে না।

 

ইলিয়ট ওয়েভের তৃতীয় ওয়েভ ট্রেড করা

ইলিয়ট ওয়েভসের তৃতীয় ওয়েভটি হচ্ছে প্রাইস অ্যাকশন সাইকেলের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী।  মনে রাখতে হবে এটার অন্য ছোট ওয়েভগুলোর চেয়ে অবশ্যই  ১৬১.৮% এর চেয়ে বেশী হতে হবে। দ্বিতীয় ওয়েভ প্রথম ওয়েভের চুড়া থেকে ৫০-৬১.৮% রিট্রেস হবে।  এসব ক্ষেত্রে আপনি সরাসরি ট্রেড ওপেন না করে পেন্ডিং বাই লিমিট ওর্ডার দিতে পারেন প্রথম ওয়েভের (এবং দ্বিতীয় ওয়েভের দৈর্ঘ্যের ভেতরে) ৫০ – এবং ৬১.৮% এর মধ্যে। টেক প্রফিট দ্বিতীয় ওয়েভের শেষ থেকে ১৬১.৮% এ প্রদান করা উচিত । ওয়েভ শুরুর কাছাকাছি স্টপ লস পাওয়া যেতে পারে বা কাছাকাছি কোন শক্তিশালী সাপোর্টের নিচে।

 

পঞ্চম ওয়েভ ট্রেড করা

পঞ্চম ওয়েভ ট্রেড করার আগে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে এটা প্রথম ওয়েভের সমান হবে না। মনে রাখতে হবে, প্রথম ওয়েভ পরিমাপ করে পঞ্চম ওয়েভ পরিমাপের ধারনা পাবেন।  চতুর্থ ওয়েব যখন শেষ হবে তখন পঞ্চম ওয়েব পরিমাপ করতে পারেন। প্রথম ওয়েভের ৬১.৮% দেখা এবং তা চতুর্থ ওয়েভ থেকে প্রজেকশন করা। তারপর বুলিশ ৫-ওয়েভের গঠনের পঞ্চম ওয়েভের শেষে শর্ট পজিশন নেয়া এবং সম্পূর্ণ সুইঙ্গের ৩৮.২% রিট্রেসমেন্টকে লক্ষ্যকেন্দ্র করা। ওয়েভ যদি কারেকটিভ (ইমপালসিভ নয়) হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে ৬১.৮% রিট্রেসমেন্টের সম্ভাবনা থাকে। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে  করতে পারেন। পোস্ট টি ভাল লাগলে শেয়ার করে রাখতে পারেন।

কিভাবে নিউজ বুঝবেন?

ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস করবো। কিন্তু কিছুই তো বুঝিনা। নিউজ দেখে এর প্রাইসের মুভমেন্ট থেকে মেন্টাল হয়ে যাচ্ছি।
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস – করলেও প্যারালাইসিস, না করলেও প্যারালাইসিস।



আমরা আপনাকে কিছু বেসিক জিনিস বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারি।

এই স্ক্রীনশটটি দেখুনঃ

ছবি পোস্ট করা হয়েছে

প্রথমে আমরা Formula টি দেখবো।

Halifax HPI m/m এই নিউজের ক্ষেত্রে Formula হলঃ
Actual > Forecast = Good for currency

এখন আমরা জানবো Actual, Forecast এবং Previous কি?

ছবি পোস্ট করা হয়েছে

এই স্ক্রীনশটে দেখুন Previous 0.2%. তারমানে হল এর আগে যখন নিউজটি পাবলিশ হয়েছিল, তখন রেসাল্ট (actual) এসেছিল 0.2%.
Forecast দিয়ে বোঝায় এবার ধারনা করা হচ্ছে যে নিউজটির রেসাল্ট 0.5% আসতে পারে। আর Actual হল এবার যে ফলাফল আসবে।
Actual এ এবার যে ফলাফল আসবে, তা পরবর্তী নিউজে Previous হিসেবে গণ্য হবে।

এখন আমরা আবার আমাদের ফরমুলায় ফিরে আসি। এখানে বলা হয়েছে, Actual > Forecast = Good for currency.
এটা GBP বিষয়ক নিউজ। তারমানে এবারের Actual এর ফলাফল Forecast (0.5%) থেকে বেশী হলে তা GBP এর জন্য ভাল।
আর যদি Actual এর ফলাফল Forecast থেকে খারাপ আসে, তবে তা GBP এর জন্য খারাপ।

এখানে এবার Actual এসেছে -1.2%. তারমানে Actual < Forecast. তারমানে Bad for currency (GBP).
সুতরাং, এখানে এই ফরমুলা কাজ করবে,

Actual > Forecast = Good for currency
Actual < Forecast = Bad for currency

এখানে, GBP এর Bad for currency আসায় GBP এর জন্য খারাপ নিউজ। তাই GBP এর পেয়ারগুলোতে এর ইফেক্ট পড়বে। যেমন, GBPUSD কমতে পারে, EURGBP বাড়তে পারে ইত্যাদি। কিন্তু সবসময় যে নিউজ এর ইফেক্ট হয় তা কিন্তু নয়, অনেক সময় বিপরীত ইফেক্টও হয়ে থাকে।

কিভাবে ট্রেড শুরু করবেন?

আমরা ফরেক্স সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছি। ডেমো অ্যাকাউন্টও ওপেন করেছি। এখন আমরা ট্রেড শুরু করব। কিভাবে আমরা একটি ট্রেড ওপেন করে তা ক্লোজ করতে পারি তা এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে।

মেটাট্রেডারে অ্যাকাউন্টে লগিন করার পর এই স্ক্রীনটি দেখতে পাবেন।

EURUSD তে ট্রেড ওপেন করার জন্য “Market Watch” উইন্ডো থেকে EURUSD তে ডাবল ক্লিক করুন।

 

নিচের মত একটি উইন্ডো ওপেন হবে। EURUSD বাই করতে চাইলে “BUY” এ ক্লিক করুন।

 

নিচের মত একটি ট্রেড ওপেন হবে। স্প্রেডের কারনে ট্রেডটি কিছু লসে ওপেন হবে।

Stop loss বা Take profit সেট করতে চাইলে SL বা TP তে ডাবল ক্লিক করুন।

একটি উইন্ডো ওপেন হবে। সেখান থেকে আপনি স্টপ লস এবং টেক প্রফিট সেট করতে পারবেন।

দেখুন স্টপ লস এবং টেক প্রফিট সেট হয়ে গেছে। ঐ প্রাইসে গেলে ট্রেড একাকী ক্লোজ হয়ে যাবে।

ট্রেডটি এখন $১ লাভে আছে। এখন আপনার ইকুইটি $৫০০১, কিন্তু ব্যালেন্স $৫০০০. ট্রেডটি ক্লোজ করে দিলে আপনার ব্যালেন্স $৫০০১ হয়ে যাবে। SL/TP প্রাইসে গেলে ট্রেডটি একাকী ক্লোজ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি এখনই ক্লোজ করে দিতে চান, তবে আপনি প্রফিটের ওপর ডাবল ক্লিক করুন।

দেখবেন ট্রেড ক্লোজ করার জন্য একটি উইন্ডো ওপেন হবে। হলুদ ক্লোজ বাটনে ক্লিক করুন।

ট্রেডটি $১ প্রফিটে ক্লোজ হয়ে গেছে।

এখন আপনার নতুন ব্যালেন্স $৫০০১.

 

কিভাবে ফরেক্সে লাভ/লস হয় ?

ফরেক্স মার্কেটে আপনি বাই (buy) অথবা সেল (sell) করবেন।

একটি ট্রেড খোলা খুবই সোজা। ট্রেড খোলার পদ্ধতি সহজ এবং আপনার যদি স্টক মার্কেটে ট্রেড করার অভিজ্ঞতা থাকে তবে আপনি তা আর তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন।

মনে করুন আপনি ১.১৮০০ এক্সচেঞ্জ রেটে EUR/USD – তে ১০,০০০ ইউরো কিনলেন $১১,৮০০ ডলার দিয়ে। দুই সপ্তাহ পর EUR/USD এক্সচেঞ্জ রেট বেড়ে ১.২৫০০ হল। তখন আপনি $১২,৫০০ ডলারে তা বিক্রি করলে আপনার লাভ হবে $৭০০ ডলার।

এক্সচেঞ্জ রেট হল একটি কারেন্সির সাপেক্ষে আরেকটি কারেন্সির দামের অনুপাত। যেমনঃ USD/CHF এর এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে, কত ইউ. এস. ডলার এর বিনিময়ে ১ সুইস ফ্রাঙ্ক কেনা যাবে, অথবা ১ ইউ. এস. ডলার কিনতে কত সুইস ফ্রাঙ্ক প্রয়োজন।

কিভাবে ফরেক্স কোটেশন পড়তে হয়

প্রতিটি ট্রেডে আপনি একই সাথে একটি কারেন্সি কিনেন এবং আরেকটি বিক্রি করেন। তাই ফরেক্স মার্কেটে কারেন্সি পেয়ারের দাম কোটেশন এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

EUR/USD এর ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট নিম্নরূপঃ

 

স্লাশ (/) এর আগের কারেন্সিকে বলা হয় বেস (base) কারেন্সি এবং স্লাশ (/) এর পরের কারেন্সিকে বলা হয় কোট (quote) কারেন্সি।

এখানে EU Rহল বেস (base) কারেন্সি এবং USD হল কোট (quote) কারেন্সি।

বাই (buy) করার সময়, এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি কেনার জন্য কত ইউনিট কোট কারেন্সি দিতে হবে। উদাহারনস্বরূপঃ ১ ইউরো কেনার জন্য ১.২৪৬০ ইউ. এস. ডলার দিতে হবে।

সেল (sell) করার সময়, এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি সেল করলে কত ইউনিট কোট কারেন্সি পাওয়া যাবে। উদাহারনস্বরূপঃ ১ ব্রিটিশ পাউন্ড বিক্রি করলে আপনি ১.২৪৬০ ইউ. এস. ডলার পাবেন।

বেস কারেন্সি হল বাই ও সেল এর মূল ভিত্তি। যদি আপনি EUR/USD বাই করেন, তবে আপনি বেস কারেন্সি EUR কিনছেন এবং একই সাথে কোট কারেন্সি USD বিক্রি করছেন। সহজ কথায়, EUR কেনা, USD বিক্রি করা।

আপনি কারেন্সি পেয়ারটি বাই করবেন যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে, কোট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি শক্তিশালী হবে। এর আপনি সেল করবেন যদি আপনি মনে করেন কোট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি দুর্বল হয়ে যাবে।

লং/সর্ট (long/short):

প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি বাই করবেন না সেল করবেন।

আপনি যদি বাই করতে চান (বেস কারেন্সি কেনা এবং কোট কারেন্সি বিক্রি করা), তার মানে আপনি চাচ্ছেন বেস কারেন্সির দাম বেড়ে যাক এবং আপনি সেটা বিক্রি করে দিবেন আরও বেশি দামে। ট্রেডারদের ভাষায় একে বলে লং (long) অথবা লং পজিশন নেয়া। মনে রাখবেন, লং = বাই (long = buy)।

আপনি যদি সেল করতে চান (বেস কারেন্সি বিক্রি করা এবং কোট কারেন্সি কেনা), তার মানে আপনি চাচ্ছেন বেস কারেন্সির দাম কমে যাক এবং আপনি সেটা কিনবেন আরও কম দামে। ট্রেডারদের ভাষায় একে বলে শর্ট (short) অথবা শর্ট পজিশন নেয়া। মনে রাখবেন, শর্ট = সেল(short= sell)।

 

বিড/আস্ক (bid/ask):

 

 

সব ফরেক্স কোটেশনে ২ টি প্রাইস দেখান হয়। বিড এবং আস্ক। প্রায় সবক্ষেত্রে বিড প্রাইস, আস্ক প্রাইস থেকে কম হয়।

বিড হল এমন একটি প্রাইস যে দামে ব্রোকার কোট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি কিনতে চায়। অর্থাৎ, সেল করার জন্য বিড হল সবচেয়ে ভাল প্রাইস।

আস্ক হল এমন একটি প্রাইস যে দামে ব্রোকার কোট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি বিক্রি করতে চায়। অর্থাৎ, বাই করার জন্য আস্ক হল সবচেয়ে ভাল প্রাইস।

বিড এবং আস্ক এর পার্থক্যই স্প্রেড (spread) নামে পরিচিত।

EUR/USD -র উপরের কোটেশনে বিড প্রাইস হল 1.3456 এবং আস্ক প্রাইস হল 1.3458.

অর্থাৎ, এখানে স্প্রেড 2 পিপস।

আপনি যদি সেল ক্লিক করেন তবে আপনি 1.3456 -এ সেল করবেন। আর যদি বাই ক্লিক করেন, তবে আপনি 1.3458 -এ বাই করবেন।

কিভাবে ফরেক্স মার্কেট থেকে আয় করা সম্ভব?

বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সর্বদায় পরিবরতনশিল। আপনি পত্রিকায় দেখে থাকবেন যে কখনও

images

কখনও ডলার টাকার বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে, আবার কখনও টাকা ডলার এর বিপরীতে শক্তিশালী হচ্চে। এরকম পৃথিবীর অধিকাংশ মুদ্রার বিপরিতেই হয়। সুতরাং, আপনার যদি ডলার কেনা থাকে, ডলারের বিপরীতে ইউরো এর দাম পরে গেলে আপনি ডলার বিক্রয় করে ইউরো কিনে রাখতে পারেন। আবার, ইউরো ডলার এর বিপরীতে শক্তিশালী হলে, ইউরো বিক্রয় করে অধিক ডলার পেতে পারেন।
হয়ত আপনার কাছে ১০০ ডলার ছিলো যা বিক্রয় করে আপনি ৮০ ইউরো ক্রয় করেছিলেন। পরবর্তীতে ইউরোর দাম বাড়ার পর তা বিক্রয় করে ১২০ ডলার পেলেন। এভাবে আপনি আয় করতে পারেন। শেয়ার মার্কেট এ শুধু শেয়ার এর দাম বাড়লেই (buy) আমরা প্রফিট করতে পারি। কিন্তু ফরেক্স মার্কেট এ, কোন কারেন্সি শক্তিশালী অথবা দুর্বল হক, দুই ক্ষেত্রেই আমাদের প্রফিট করার সুযোগ আছে যেটা ফরেক্স মার্কেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা।